চিংড়ি মাছের উপকারিতা ও অপকারিতা-ও এর বৈশিষ্ট
প্রিয় পাঠক আমরা এই পাঠে চিংড়ি মাছের উপকারিতা ও অপকারিতা এবং চিংড়ি কি মাছ
নাকি পোকা এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি আপনি যদি চিংড়ি মাছ সম্পর্কে
যেকোনো তথ্য জানতে চান তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য প্রযোজ্য। দয়া করে
আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে করবেন।
আমরা চিংড়ি মাছ সম্পর্কে আরো অনেক বিষয় আলোচনা করেছি সম্পূর্ণ জানতে নীচে
বিস্তারিত করুন।
সূচিপএঃ চিংড়ি মাছের উপকারিতা ও অপকারিতা-ও এর বৈশিষ্ট
ভূমিকা
পৃথিবীর প্রায় সকল দেশে চিংড়ি খুবই জনপ্রিয় একটি নাম। এটি আর্থোপোডা পূর্বের
একটি প্রাণী। এছাড়াও এটির অনেকগুলো জাত আছে। বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি যে দুইটি
জাত পাওয়া যায় তা হল গলদা ও বাগদা। গলদা চিংড়ি মিঠা পানিতে বসবাস করে এবং
বাগদা চিংড়ি লোনা পানিতে বসবাস করে।
চিংড়ি খেয়ে অনেকে জলের পোকাও বলে থাকে কারণ এটি আর্থোপোডা পূর্বের তাই।
এবং চিংড়ির অর্থনৈতিক গুরুত্ব অনেক বেশি।
চিংড়ি মাছের বৈশিষ্ট্য
চিংড়ি মাছের বৈশিষ্ট্য হলো, এদের দেহ বিভিন্নভাবে বিভক্ত। এদের দেহে কোন প্রকার
হিমোগ্লোবিন থাকেনা যার ফলে এদের শরীরের ভেতরেও সাদা বাইরে ও সাদা কোন রক্ত থাকে
না। এবং এদের মাথায় একজোড়া এন্টেনার মতো সুক্ষ একটা অঙ্গ থাকে। এদের দেহটা একটু
পেছানো টাইপের হয়ে থাকে। এবং এদের কোনো মেরুদন্ড থাকে না এরা মেরুদন্ডবিহীন একটি
প্রাণী।
আরো পড়ুনঃ কৈ মাছের বৈশিষ্ট্য
এদেরকে অনেক সময় সমুদ্রের পোকা বলেও গণ্য করা হয়ে থাকে। এরা নোনা এবং
মিঠা দুই ধরনের পানিতে বসবাস করতে পারে। কিন্তু বর্তমানে সময় নেই এই চিংড়িগুলো
পুকুরেও চাষ করা হয়ে থাকে। এই চিংড়ির প্রায় অনেকগুলো জাত আছে যেগুলো নোনা পানি
এবং মিঠা পানিতে থাকে।
চিংড়ি মাছ কত প্রকার
পৃথিবীতে প্রায় সাড়ে চারশ মতো চিংড়ি আছে তার ভিতরে বাংলাদেশেই ৬৭ প্রজাতির
রয়েছে। এর মধ্যে লোনা পানিতে রয়েছে-বাগদা, বাগধারা, হরিনা, কচু, হন্নি, রুডা ও
কোলা ইত্যাদি। এবং সাধু পানিতে রয়েছে-গলদা শটকা ইত্যাদি। বাংলাদেশে গলদা ও বাগদা
চিংড়ির চাহিদা অনেক বেশি। এবং বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি চাষ হয় এই দুটি চিংড়ি।
আরো পড়ুনঃ দেশি কৈ মাছ চেনার উপায়
গলদা হচ্ছে মিঠা বা সাধ পানির মাছ এবং বাগদা হচ্ছে লোনা পানির মাছ। গলদা ও
বাগদা সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত বলা হলোঃ
- গলদা চিংড়ি
গলদা চিংড়ি প্রায় সারা বছরে বিভিন্ন নদীর মোহনায় খাল বিল অঞ্চলে নভেম্বর থেকে
ডিসেম্বর মাসের মধ্যে পাওয়া যায়। সামান্য মিঠা অথবা সাধু পানি এই গলদা চিংড়ির
বসবাসের জন্য একদম উপযুক্ত ।এটি বাংলাদেশে বিভিন্ন জেলায় চাষ করা হয়ে থাকে
যেমনঃ চাঁদপুর, বাগেরহাট, দাউদকান্দি ইত্যাদি জায়গায়। এদের দৈহিক বৈশিষ্ট্যঃ
- এদের দেখতে কিছুটা হালকা নীল ও হালকা সবুজ
- এদের ওজন প্রায় ৩৫০ গ্রাম হয়ে থাকে
- এরা প্রায় সবরকম খাদ্যই খায়
- এদের মাথা দেহের তুলনায় বড়
- বাগদা চিংড়ি
বাংলাদেশের প্রায় সকল উপকূলীয় অঞ্চলে এ বাগদা চিংড়ি পাওয়া যায় যেমনঃ
কক্সবাজার, টেকনাফ বাঁশখালী, খুলনা বাগেরহাট ইত্যাদি স্থানে। এদের দৈহিক
বৈশিষ্ট্যঃ
- এদের দেহ হালকা বাদামী থেকে সবুজ
- দেখে মোটা ডালাকাটা দাগ আছে
- মাথার চেয়ে দেহ বড
- এরা নোনা পানিতে বাস করে
- চিংড়ি কি মাছ নাকি পোকা
আর্থোপোডা পূর্বের প্রাণী হচ্ছে চিংড়ি। এবং মাছ হচ্ছে কর্ডাটা পূর্বের প্রাণী।
তাই মাছ ও চিংড়ি দুটোই আলাদা প্রাণী। চিংড়িকে তাই মাছের মধ্যে ধরা হয় না।
এছাড়াও কর্ডাটা পূর্বের সকল প্রাণী বা মাছের মেরুদন্ড থাকে কিন্তু চিংড়ি হলো
এমন একটি প্রাণী যার কোন মেরুদন্ড থাকে না। এছাড়াও মাছের শ্বাসকার্য চলে ফুলকার
মাধ্যমে কিন্তু চিংড়ির কোন ফুলকা থাকে না।
এছাড়াও মাছের একটি মাথা কয়েকটি লেজ থাকে এর মাধ্যমে তারা পানিতে এক স্থান
থেকে অন্য স্থানে চলাচল করতে পারে কিন্তু চিংড়ির অনেকগুলো পা থাকে এবং এরা পা
দিয়ে একই স্থান থেকে অন্য স্থানে চলাচল করে। এছাড়াও অনেকগুলো জাত রয়েছে যেমন
পাবদা ও বাগদা। আর এসব কারণেই চিংড়ি খেয়ে পানির পোকা বলা হয়ে থাকে।
চিংড়ি মাছের পুষ্টি উপাদান
আমাদের বাংলাদেশ প্রায় ৬৭ প্রজাতির চিংড়ি পাওয়া যায়। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে
দুইটি প্রজাতি চিংড়ি বেশি বিখ্যাত সেটি হলো গলদা ও বাগদা। এ সকল চিংড়ি মাছের
পুষ্টিউপাদান অনেক বেশি। ছোট চিংড়িগুলো অনেক স্বাস্থ্যকর এগুলো যেকেউ খেতে পারে।
বিশেষ করে এসব ছোট চিংড়ি কেউ যে কোন সবজির মধ্যে দিয়ে খেতে পারে।
আরো পড়ুনঃ কৈ মাছের উপকারিতা
চিংড়ি মাছ মানুষের ক্যান্সার রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে চিংড়ি মাছের
প্রায় ৫৭% সিলিলিয়াম থাকে ১০০ গ্রাম চিংড়িতে প্রায় অনেক পরিমাণ সিলিলিয়াম
পাওয়া যায়। বিজ্ঞানীদের মতে এই সিলিয়াম দেহে ক্যান্সার কোষ তৈরি করতে বাধা
প্রদান করে। এছাড়াও চিংড়ি মাছ মানবদেহে রক্তস্বল্পতা অনেক দূর করে।
চিংড়ি মাছ আমাদের দেহে ভিটামিন বি চাহিদা প্রায় ২৫% দূর করে থাকে এছাড়াও
এটি আমাদের রক্তের লাল কণিকা বা হিমোগ্লোবিন বাড়াতে সাহায্য করে। চিংড়ি মাছ
হাড়ের ক্ষয় রোধ দূর করে যা হারগে অনেক শক্তিশালী করে।
এছাড়া চিংড়ি মাছের পুচু পরিমান আয়রন থাকে যা বিভিন্ন বয়সী মানুষের জন্য
অনেক উপকারী। চিংড়ি মাছ এছাড়া ফ্যাট কমাতে সাহায্য করে।
চিংড়ি মাছের অর্থনৈতিক গুরুত্ব
বাংলাদেশে মৎস্য চাষের মধ্যে সবচেয়ে লাভজনক হলো চিংড়ি চাষ। জাতীয় আয়
কর্মসংস্থান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের জন্য এই চিংড়ি মাছের অর্থনৈতিক গুরুত্ব অনেক
বেশি। বাংলাদেশের প্রায় সকল উপকূলীয় অঞ্চলে এই চিংড়ি চাষ হয়ে থাকে। বাংলাদেশে
দুই রকম চিংড়ি সবচেয়ে বেশি চাষ করা হয়ে থাকে একটি হলো বাগদা এবং অন্যটি হলো
গলদা।
আরো পড়ুনঃকৈ মাছ কোন জেলায় পাওয়া যায়
গলদা হচ্ছে সাধু পানির চিংড়ি এবং বাগদা হচ্ছে লোনা পানির মাছ। সত্তর দশকের
দিকে এশিয়া মহাদেশে চিংড়ির দাম অনেক বেশি হয় এখানে চিংড়ি চাষের গুরুত্ব অনেক
বেড়ে যায়। এবং তাই সেই ৭০ দশক থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত এদেশে চিংড়ি চাষ একটি
গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। বাংলাদেশে পোশাক শিল্পের পর এই চিংড়ি শিল্পীর অবস্থান।
এই চিংড়ি পুকুর খাল বিল নদী নালা ছাড়াও চারদিক ঘেউ করে অথবা পলিথিন দিয়ে
চারিদিক ঘিরে এটি চাষ করা যায়। যার ফলে কম জায়গার মধ্যেও এটি চাষ করা যায় এবং
ব্যাপক ফলন পাওয়া যায়। এই চিংড়ি চাষ করে বাংলাদেশের অনেক মানুষ আজ স্বাবলম্বী
এবং তারা বেকারত্ব থেকে অনেক দূরে। এবং এর ফলে এ দেশের অর্থনীতিতে একটি
গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তণ এসেছে।
চিংড়ি মাছের উপকারিতা ও অপকারিতা
চিংড়ি মাছের অনেকগুলো উপকারিতা এবং এর পুষ্টিগুণ উপকারিতা রয়েছে কিন্তু এর সাথে
সাথে এর কিছু অপকারিতা রয়েছে। তাই এর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে নিজে
বিস্তারিত দেওয়া হলোঃ
- উপকারিতা
বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সবচেয়ে পরিচিত ও জনপ্রিয় হল চিংড়ি।এবং সকল
চিংড়ি মাছের পুষ্টিউপাদান অনেক বেশি। ছোট চিংড়িগুলো অনেক স্বাস্থ্যকর এগুলো
যেকেউ খেতে পারে। বিশেষ করে এসব ছোট চিংড়ি কেউ যে কোন সবজির মধ্যে দিয়ে খেতে
পারে।
চিংড়ি মাছ মানুষের ক্যান্সার রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে চিংড়ি মাছের
প্রায় ৫৭% সিলিলিয়াম থাকে ১০০ গ্রাম চিংড়িতে প্রায় অনেক পরিমাণ সিলিলিয়াম
পাওয়া যায়। বিজ্ঞানীদের মতে এই সিলিয়াম দেহে ক্যান্সার কোষ তৈরি করতে বাধা
প্রদান করে।
এছাড়াও চিংড়ি মাছ মানবদেহে রক্তস্বল্পতা অনেক দূর করে। চিংড়ি মাছ আমাদের
দেহে ভিটামিন বি চাহিদা প্রায় ২৫% দূর করে থাকে এছাড়াও এটি আমাদের রক্তের লাল
কণিকা বা হিমোগ্লোবিন বাড়াতে সাহায্য করে।
- অপকারিতা
চিংড়ি মাছের অনেক উপকারিতা বা পুষ্টিগুণ উপকার রয়েছে কিন্তু এর কিছু অপকারিত
রয়েছে। বিশেষ করে যাদের অ্যালার্জির সমস্যা তাদের জন্য চিংড়ি খাওয়া অনেক
বিপদজনক। কারণ তারা যদি চিংড়ি খায় তাহলে তাদের শরীরে প্রচুর পরিমাণ চুলকানি
শুরু হয়ে যায়। এছাড়াও চিংড়িতে কোলেস্টেরল থাকে যা অনেকের হৃদরোগের জন্য
ক্ষতিকর।
আরো পড়ুনঃ কৈ মাছ কত বছর বাঁচে
চিংড়ি মাছ নদী অথবা সমুদ্র থেকে ধরা হয় যার ফলে এটি যদি ভালোভাবে
পরিষ্কার না করে রান্না করা হয় তাহলে এটি খেলে বিভিন্ন রকম পেটে সমস্যা হতে
পারে।
লেখকের মন্তব্য
আপনারা যদি চিংড়ি মাছের উপকারিতা ও অপকারিতা ও এর বৈশিষ্ট সম্পর্কে জেনে উপকৃত
হয়ে থাকেন তাহলে দয়া করে এ আর্টিকেলটি অন্যদেরকে শেয়ার করে তাদের কেউ উপকৃত
করুন।
rsfahim it নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url