খেজুরের গুড়ের উপকারিতা ও অপকারিতা খেজুরের রস থেকে গুড় তৈরি


আপনার যদি অনেক খোঁজাখুজুর পরও খেজুরের গুড়ের উপকারিতা ও অপকারিতা এবং খেজুরের গুড়ের পুষ্টি উপাদান সম্পর্কে ভালোভাবে কোন তথ্য খুঁজে পাচ্ছেন না। তাহলে এ আর্টিকেলটি আপনার জন্য।
খেজুরের গুড়ের উপকারিতা ও অপকারিতা


আপনি যদি খেজুরের গুড় এবং খেজুরের রস সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে চান তাহলে আমাদের আর্টিকেলটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

সূচিপএঃ খেজুরের গুড়ের উপকারিতা ও অপকারিতা খেজুরের রস থেকে গুড় তৈরি

ভূমিকা

ভোজন রসিক বাঙ্গালীদের শীতকারলে সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি খাবার হচ্ছে খেজুরের রস এবং এর গুড়। তারা শীতের সকাল শুরু করে খেজুরের রস এবং মুড়ি খেয়ে । এবং তারা খেজুর রস দিয়ে গুড় তৈরি করে থাকে।
আরো পড়ুনঃ শীতের পিঠার নাম 
 এই গুড়কে তারা প্রক্রিয়াজাত করে বিভিন্ন প্রকার খাবার তৈরি করে । এছাড়াও এই খেজুরের রস এবং গুড়ের অনেক রকম উপকারিতা এবং পুষ্টিগুণ রয়েছে। এর সাথে এর কিছু উপকারিতা রয়েছে। এ সকল বিষয় নিয়ে আমরা আজকের এই আর্টিকেলে আলোচনা করব।

শীতকালে খেজুরের রস

আবহমান গ্রাম বাংলায় শীতের সকালে খেজুরের রস একটি জনপ্রিয় খাবর। সময়ের আবর্তন ও বহু ঋতুর মধ্য দিয়ে আমাদের অনেক কিছু হারিয়েছে কিন্তু বাঙালির এই ঐতিহ্য টা এখনো থেকে গেছে। গ্রাম বাংলায় শীতের সকালে খেজুরের রস ছাড়া যেন কিছু চিন্তাই করা যায় না। শীতের সকালে কাক ডাকা ভোর হলেই কাছি ছুটে খেজুর রস সংগ্রহ করতে।
 এই খেজুর রস খেজুরের গাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। শীত পড়ার কিছুদিন আগেই কাছিরা এই খেজুর গাছকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে গাছের আগা চেয়েছে নেয়। এবং এরপর আগাই একটি মাটির হাড়ি পেতে দেয় এই মাটির হাঁড়িতে সারাদিন ফোঁটা ফোটা করে রস পড়তে থাকে।

 এইভাবে করে সারাদিন সারা রাত পার হওয়ার পর হাঁড়িটি যখন ভর্তি হয়ে যায় তখন কাছিরা সকালে গিয়ে রস ভর্তি হাঁড়িটা নামিয়ে আবার আরেকটি হাড়ি পেতে দেয়। আর এভাবেই প্রতিদিন শীতের সকালে খেজুর গাছ থেকে খেজুরের রস সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। গ্রামবাংলায় এই খেজুর রসকে নিয়ে অনেক রকম উক্তি এবং কবিতাও রয়েছে।

 এছাড়াও খেজুর রস বাঙালিরা সকালবেলায় মুড়ির সাথে খেতে অনেক পছন্দ করে। এছাড়াও শীতেবিভিন্ন ধরনের পিঠা পুলি বানানোর কাজেও এই খেজুর রস ব্যবহার হয়ে থাকে।

খেজুরের রসের উপকারিতা ও অপকারিতা

বাঙ্গালীদের শীতকালে সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী একটি খাবার হচ্ছে খেজুরের রস। খেজুরের রস পছন্দ করো না এমন মানুষ হয়তোবা খুঁজে পাওয়া মুশকিল। বাঙ্গালীদের মধ্যে কম বেশি সবাই খেজুরের রস শীতের সময় অনেক বেশি পছন্দ করে। অনেকে আবার এই রসকে প্রক্রিয়াজাত করে বিভিন্ন প্রকার গুড়, পিঠাপুলে ইত্যাদি তৈরি করে থাকে।
 শীতকালে যেন খেজুর রস বাঙালিদের খাদ্য তালিকায় একটি মূল আকর্ষণ হয়ে দাঁড়ায়। এছাড়াও আজ আমরা খেজুর রসের বিভিন্ন রকম উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানবো।
  • উপকারিতা
খেজুর রসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে এনার্জি যা আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। এবং এটি বিভিন্ন শারীরিক দুর্বলতা কাটাতে অনেক কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। খেজুরে শর্করা বা গ্লুকোজের পরিমাণ ১৫ শতাংশ হয়ে থাকে যা আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। এছাড়াও খেজুরের রসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ খনিজ প্রোটিন ফ্যাট এবং মিনারেল।

 খেজুরের গাছ থেকে শুরু খেজুর অথবা খেজুর রস নয় এছাড়াও এই গাছ বিভিন্ন কাজে ব্যবহার হয়ে থাকে। বাঙ্গালীদের প্রতি ঐতিহ্যবাহী একটি জিনিস হচ্ছে শীতল পাটি যা খেজুরের পাতা দিয়ে তৈরি হয়। এবং এছাড়াও খেজুর গাছের ডালপালা জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
  • অপকারিতা
শীতকালেরেই গ্রাম এবং শহর সব জায়গাতেই খেজুরের রস খাওয়ার একটি আমেজ বিরাজ করে। তাই খেজুর রস খাওয়ার যেমন উপকারিতা আছে তেমন এর অনেকগুলো উপকারিতা ও রয়েছে। খেজুরের রস বিশেষ করে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অনেক ক্ষতিকর। এছাড়াও এটিতে পটাশিয়াম থাকার কারণে যাদের কিডনিতে ক্ষতি করে।

 এছাড়াও রক্তের সমস্যা এজমা রয়েছে এরকম রোগীর জন্য খেজুর রস অনেক ক্ষতিকর। বর্তমানে নিপা ভাইরাস নামে একটি ভাইরাস পাওয়া গেছে। এই ভাইরাসে জানুয়ারিতে ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে মানুষ বেশি আক্রান্ত হয়।

 যার ফল ধারণা করা হয় খেজুরের রসের ফলেই এই ভাইরাসটি হচ্ছে। কারণ খেজুরেরে রস সংরক্ষণের সময় এতে বাদুর সহ বিভিন্ন পোকামাকড় এবং পাখি মুখ দেয় যার ফলে এ ভাইরাসটি হয় বলে বিজ্ঞানের ধারণা করে।

খেজুরের রসের গুড় তৈরি

শীতের সকালে বাঙ্গালীদের খাবারের তালিকায় জনপ্রিয় ও সুপরিচিত একটি নাম হলো খেজুরের রস। খেজুর রস না ছাড়া যেন গ্রাম বাংলার ভোজন রসিক বাঙ্গালীদের শীতের সকাল জমেই না। গ্রাম বাংলার বাঙালিরা প্রতিদিন কুয়াশাচ্ছন্ন সকালে এক গ্লাস খেজুরের রসের সাথে মুড়ি দিয়ে খেয়ে সকাল শুরু করে।
 এবং এই খেজুরের রস দ্বারা শুধু মুড়ি দিয়েই নয় বরং আরো নানান কাজে ব্যবহার করে থাকে। যেমন বিভিন্ন রকম পিঠাপুলে, পায়েস ইত্যাদি তৈরিতে এই খেজুর রস ব্যবহার হয়ে থাকে। এছাড়াও খেজুর রস দিয়ে তৈরি সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি জিনিস হলো গুড়।

 বাঙ্গালীদের কাছে অনেক জনপ্রিয় ও সুপরিচিত একটি নাম হলো এই খেজুরের গুড়। এবং এ খেজুর গুড় তৈরির মূল উপকরনই হলো খেজুরের রস। গুড় তৈরির জন্য এই খেজুর রসকে প্রথমে বড় একটি পাতিলে জাল দিয়ে গরম করতে হয়। প্রায় এক থেকে দুই ঘন্টা পর্যন্ত এটিকে জাল দিয়ে গরম করতে হয়।

 এবং গরম করতে করতে যখন এটির মধ্যে লালচে এবং আঠালো একটি ভাব আসে তখন জাল দেওয়া বন্ধ করে দিতে হয়। এরপর এটিকে বিভিন্ন আকৃতির পাত্রে ঢেলে প্রায় পাঁচ থেকে ছয় ঘন্টা পর্যন্ত রেখে দিতে হয়। তাহলেই গুড় তৈরি হয়ে যায়। আপনি এগুলোকে চাইলে বিভিন্ন আকৃতির করতে পারেন।

 আপনি যে আকৃতির চান সে আকৃতির পাত্রে রাখলেই এটি সে আকৃতি ধারণ করে। আর এভাবে গ্রামবাংলায় হাজার বছর ধরে খেজুরের গুড় তৈরি হয়ে আসছে।

খেজুরের গুড়ের পুষ্টি উপাদান

শীতকালে খেজুরের রস যেমন আমাদের সবার জনপ্রিয় একটি খাবার তেমনি খেজুরের রস দিয়ে তৈরি খেজুরের গুঁড়ো অনেক জনপ্রিয়। শীতকালে আমরা বিভিন্ন রকমের পিঠাপুলে পায়েস ইত্যাদি খেয়ে থাকি আর এগুলোর মূল উপকরণ হলো এই খেজুরের গুড়। এবং এর পুষ্টিগুণ উপাদানও অনেক বেশি। এই গুড় আমরা চিনির বিকল্প হিসেবে বিভিন্ন খাবারে ব্যবহার করে থাকি।
 এটি প্রচুর পরিমাণ মিষ্টি হওয়ার ফলে এতে অনেক নিউট্রিশন রয়েছে যা আমাদের শরীরের শক্তি যোগায়। চিনির তুলনায় গুড় অনেক বেশি উপকারী কারণ ১০০ গ্রাম করে প্রায় 26 গ্রাম কার্বোহাইড্রেড থাকে। এছাড়াও যাদের মিষ্টিতে অনেক বেশি সমস্যা হয় তারা চাইলে গুড় অল্প পরিমানে খেতে পারে। কারণ গুড়ে আয়রন, জিস্ক ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফেট ইত্যাদি থাকে।

 যা আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। এছাড়াও এতে প্রচুর পরিমাণ আইরন থাকে যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এবং যারা রক্তস্বল্পতায় ভোগে তাদের জন্য এটি আরো বেশি উপযোগী।

 ভুলে যেহেতু সুগারের পরিমাণ খুবই কম থাকে সে ক্ষেত্রে আপনারা চাইলে ডায়াবেটিস রোগীদেরকেও স্বল্প পরিমাণে এই খেজুরের গুড় দিতে পারেন। পরিশেষে বলা যায় যে খেজুরের এ ধরনের পুষ্টিগুণ চাহিদা থাকে।

খেজুরের গুড়ের উপকারিতা ও অপকারিতা

শীতকালে খেজুরের রস যেমন জনপ্রিয় তেমনি খেজুরের গুড়ও হলো একটি জনপ্রিয় নাম। শীতকালে খেজুরের গুড় ছাড়া যেন শীতকাল মানায় না। শীতকালে বাঙালিরা এই খেজুরের গুড় দিয়ে নানান পদের খাবার তৈরি করে থাকে। যা তাদের কাছে অনেক প্রিয় একটি খাবার। আজ আমরা আপনাদেরকে খেজুরের উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে কিছু কথা বলব।
  • উপকারিতা
খেজুরের গুড় এর মূল উপকরণ হলো খেজুরের রস। খেজুরের রস দিয়েই এই খেজুরের গুড় তৈরি হয়ে থাকে। এই গুড়ের অনেক রকম উপকারিতা রয়েছে। এই গুড় আমরা চিনির পরিবর্তে বিভিন্ন খাবারে ব্যবহার করে থাকি।

 এছাড়াও ঘুরে অনেক কম পরিমাণ সুগার থাকায় এটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অনেক উপযোগী। তারা চাইলে মিষ্টির পরিবর্তে অল্প পরিমাণে খেতে পারে। শুধু তাই নয় ঘুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ আয়রন, প্রোটিন, ফসফেস ইত্যাদি গুনাগুন যা আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
  • অপকারিতা
গুড়ে যেমন বিভিন্ন রকম উপকারিতা রয়েছে তেমনি কিছু অপকারিত রয়েছে। ঘুরে প্রচুর পরিমাণ ফ্যাট রয়েছে যা আমাদের ওজন বাড়িয়ে দিতে পারে। চিনির তুলনায় গুড় স্বাস্থ্যকর হলেও এটি বেশি পরিমাণে খেলে আমাদের শরীরে রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে। এছাড়া গুড যদি স্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি না হয় যদি ঘুরে জীবাণু থেকে যায়।

 তাহলে এটি খাওয়ার মাধ্যমে আমাদের বিভিন্ন রকম ভাইরাসও হতে পারে। আমরা সবাই জানি খেজুরের রস কাঁচা খাওয়ার ফলে অনেকের নিপা ভাইরাস হয়ে থাকে। আর গুড় তৈরির মূল উপকরণই হলো খেজুরের রস। যদি খেজুর রস ভালোভাবে জাল দেওয়া না হয় জীবাণু সংক্রমণ যদি থেকে যায় তাহলে এটি খাওয়ার মাধ্যমে আমাদের নিপা ভাইরাস হতে পারে।

খেজুরের গুড় কোথায় পাওয়া যায়

গ্রাম বাংলার বাঙ্গালীদের শীতকালে সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী একটি খাবার হচ্ছে খেজুরের গুড়। খেজুরের গুড়ের মূল উপকরণই হলো খেজুরের রস। এই খেজুরের রস দিয়ে খেজুরের গুড় তৈরি করা হয়ে থাকে। বর্তমানে বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি জেলাতেই খেজুরের গুড় পাওয়া যায়। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলগুলোতে এটির চাহিদা অনেক বেশি। শহরেও এটি চাহিদা রয়েছে কিন্তু শহরে এটি তৈরি করা হয় না।

 বাংলাদেশের বিভিন্ন গ্রাম অঞ্চল যেমন পঞ্চগড়, রাজশাহী, কুমিল্লা, বরিশাল ইত্যাদি বিভিন্ন জেলায় খেজুরের রস দিয়ে খেজুরের গুড় তৈরি করা হয়ে থাকে। বর্তমানে রাজশাহীতে খেজুরের গুড় প্রতি কেজি তিনশ টাকা।

 ঢাকাতে এটির দাম হয়তোবা আরো বেশি হবে। এছাড়াও বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় চিনিকল হলো রাজশাহীর পাবনা জেলাতে। আর এই চিনির মূল উপকরণ হলো খেজুরের রস অথবা কুসরের রস এই দুইটি দিয়ে চিনি তৈরি করা হয়ে থাকে।

লেখকের মন্তব্য

আপনি যদি আমাদের এই আর্টিকেলটি পড়ে বুঝতে পারেন যে কিভাবে একজন কাছি খেজুর গাছ থেকে খেজুর রস সংগ্রহ করে এবং সেটি প্রক্রিয়াজাত করে গুড় তৈরি করে তাহলে দয়া করে এই আর্টিকেলটি অন্যদেরকে শেয়ার করে তাদেরকেও জানাবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

rsfahim it নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url