সিজারের কতদিন পর সেলাই শুকায় এবং সিজারিয়ানের যত্ন


আপনি যদি একজন সিজারিয়ান হন তাহলে আপনার অবশ্যই সিজারের কতদিন পর সেলাই শুকায় এবং সিজারের পর বেল্ট পরার নিয়ম সম্পর্কে জানা দরকার কারণ এর ফলে আপনি সিজারের পরও সুস্থ থাকতে পারবেন। আর এই সকল বিষয় সম্পর্কে আমাদের এই আর্টিকেলে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

সিজারের কতদিন পর সেলাই শুকায়


তাই আপনি যদি সিজার সম্পর্কিত সকল তথ্য জানতে চান তাহলে আমাদের এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণটা একবার পড়ুন।

সূচিপএঃ  সিজারের কতদিন পর সেলাই শুকায়  এবং সিজারিয়ানের যত্ন

সিজারের কতদিন পর সেলাই শুকায়

সিজারের কতদিন পর সেলাই শুকায় আপনি যদি একজন সিজারের রোগী হয়ে থাকেন তাহলে একবার হলেও আপনার মনে এই প্রশ্নটি এসে থাকবে। আসলে নরমাল ডেলিভারি থেকে সিজারে যেহেতু একটু কাটা ছিলা বেশি হয় তাই এখানে সেলাই শুকাতে একটু সময় লাগে। তাই আজকে আমরা আপনাদেরকে জানাবো যে সিজারের কতদিন পর আপনাদের সেলাই সম্পূর্ণভাবে শুকাবে।
সাধারণত একটি সিজারের রোগীর সুস্থ হতে সাত দিন সময় লাগবে। অর্থাৎ সিজারের সাত দিন পর রুগী স্বাভাবিকভাবে হাঁটাচলা করতে পারবে কিন্তু কোন রকম ভারী কাজ করতে পারবে না। সাধারণত একজন সিজারের রোগীর সম্পূর্ণ শিলায় অথবা ঘা শুকাতে অন্তত দুই থেকে আড়াই মাস সময় লেগে থাকে।

অনেকে রয়েছে সিজারের কয়েকদিন পর থেকে একটু সুস্থ মনে হলে সকল রকম কাজ করতে থাকে যার ফলে সেলাই শুভতে অনেক সময় লেগে থাকে আবার অনেকের ইনফেকশনও হয়ে যায়। তাই সম্পূর্ণ সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত ভারী তেমন কোন কাজ করা।

সিজারের পর বেল্ট পরার নিয়ম

সিজারের কতদিন পর সেলাই শুকায় এ সম্পর্কে উপরের অংশে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে তাই এবার আমরা এখানে সিজারের পর বেল্ট পরার নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা করব। বর্তমানে বাচ্চা প্রসবের সবচাইতে সহজ এবং আরামদায়ক পদ্ধতি হচ্ছে সিজার পদ্ধতি।

 এর মাধ্যমে কোন কষ্ট ছাড়াই একজন মা বাচ্চা প্রসব করতে পারে। কিন্তু এটি যেমন সুবিধা রয়েছে তেমন কিছু অসুবিধা রয়েছে এটি সবচেয়ে বড় অসুবিধা হচ্ছে পেট ফুলে যাওয়া বা পেটে অতিরিক্ত মেদ বৃদ্ধি পাওয়া।
নরমাল ডেলিভারির চেয়ে সিজারে একজন মেয়ের পেটের মেদ আগের চেয়ে অনেক বেড়ে যায়। তার পেটের এই মেদ কমানোর জন্য সবচেয়ে উপকারী পদ্ধতি হচ্ছে বেল্ট ব্যবহার করা। কিন্তু এই যখন তখন ব্যবহার করলে এর সুফল পাওয়া যাবে না এটি ব্যবহার করার কিছু নিয়ম রয়েছে আর এই নিয়মগুলো নিচে দেওয়া হল।

আপনি যদি নরমাল ডেলিভারি করেন তাহলে এর একদিন পর থেকে আপনি বেল্ট ব্যবহার করতে পারবেন কিন্তু সিজার হলে সিজারের সেলাই শুকানোর পর এই বেল্ট পড়তে হবে। এই বেল্ট পড়ার সঠিক নিয়ম হচ্ছে 10 থেকে 12 ঘন্টা প্রায় 40 দিন পর্যন্ত পড়তে হবে।

আর খাওয়া-দাওয়ার পর প্রায় আধাঘন্টা পর এই বের করতে হবে এবং গোসল করার সময় এই বেল্ট খুলে রেখে তারপর গোসল করতে হবে। আর এভাবে যদি আপনি বেল্ট ব্যবহার করতে পারেন তাহলে আপনি খুব সহজেই নিজের পেটের অতিরিক মেদ কমাতে পারবেন।

সিজারের পর খাবার তালিকা

বর্তমানে প্রতিটা গর্ভবতী মা বাচ্চা প্রসব করার জন্য সিজারিয়ান ব্যবস্থাকেই বেছে নিচ্ছে। কারণ নরমাল ডেলিভারিতে বাচ্চা প্রসব কালে একজন গর্ভবতী মায়ের প্রচুর পরিমাণ পেইন এবং ব্যথা হয়ে থাকে আর যেটি অনেকে সহ্য করতে পারে না। আর সিজারের মাধ্যমে একজন গর্ভবতী মাকে অবশ করে তলপেট একটু কেটে তারপর বাচ্চা বের করা হয় যার ফলে তেমন কোন কষ্ট হয় না।

কিন্তু সিজারে বাচ্চা হওয়ার পর একজন মায়ের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে অনেক সময় লাগে কারণ সিজারে বাচ্চা প্রসবকালে একজন মায়ের প্রচুর পরিমাণ ব্লিডিং হয় এবং কিছুটা মাংসপেশি বেশি কেটে বাদ দেওয়া হয়।
আর তাই সিজারের সময় নিজেকে সুস্থ করতে নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার খাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই আজকে আমরা আলোচনা করব যে একজন গর্ভবতীর সিজারের পর খাবার তালিকা এর মধ্যে কি কি থাকবে এই সম্পর্কে।

১। সিজারের পর একটি মহিলার শরীরে আয়রনের সবচেয়ে বেশি ঘাটতি দেখা যায়। তাই সিজারের সময় আয়রন যুক্ত খাবার বেশি বেশি করে খেতে হবে আর মানুষের সবচাইতে বেশি আয়রন থাকে তাই এ সময় মাংস খেতে হবে কিন্তু বেশি খাওয়া যাবে না পর্যাপ্ত পরিমাণে খেতে হবে।

২। এছাড়াও এই সময় প্রতিটি মায়ের প্রোটিনের প্রয়োজন হয়ে থাকে তাই এ সময় বেশি বেশি প্রোটিন যুক্ত খাবার খেতে হবে যেমন পনির, দুধ, ডিম ইত্যাদি জাতীয় খাবার বেশি বেশি করে খেতে হবে।

৩। বিভিন্ন প্রকার ভিটামিন যুক্ত খাবার বেশি বেশি করে খেতে হবে কারণ এটি মায়েদের টিস্যু মেরামত ত এবং শরীরে কোলাজেন উৎপাদনে সাহায্য করে থাকে। বিশেষ করে এ সময় ভিটামিন সি যুক্ত খাবার যেমন কমলা, আঙ্গুর তরমুজ ইত্যাদি।

৪। সিজারের পর প্রত্যেকটি মায়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যেটি খাবার সেটি হচ্ছে কাকজি লেবু বেশি বেশি করে খাওয়া কারণ এটিতে ভিটামিন সি রয়েছে যা মায়েদের সেলাই শুভতে সাহায্য করে।

৫। মসুর ডাল বেশি বেশি করে খেতে হবে কারণ মসুরের ডালে রয়েছে ফাইবার এবং খনিজ যা দেহে শক্তি যোগাতে সাহায্য করে।

৬। এবং বিভিন্ন প্রকার শাকসবজি যেমন লাল শাক সবুজ শাক কচু শাক ইত্যাদি বেশি বেশি করে খেতে হবে কারণ এগুলো শরীরের রক্ত শূন্যতা থেকে দূর করে এবং রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে।

৭। এছাড়া সিজারের রোগীকে প্রতিটি ডাক্তার গমের রুটি বেশি বেশি করে খেতে বলে কারণ গমের রুটিতে রয়েছে ফাইবার সিজারের রোগীর কাঁটা স্থান বা ক্ষত স্থান শুকোতে করে।

সিজারের কতদিন পর জার্নি করা যায়

প্রতিটি সিজারের রোগীর মনে একটি প্রশ্ন আসে যে সিজারের কতদিন পর সেলাই শুকায় এবং সিজারের কতদিন পর জার্নি করা যায়। আসলে আমাদের প্রত্যেকেরই বিভিন্ন রকম কাজে বা বিভিন্ন রকম প্রয়োজনে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে হয় যার ফলে আমাদেরকে অনেক জার্নি করতে হয়। কিন্তু একজন সিজারের রোগীর পক্ষে অপারেশনের পরপরই কোথাও জার্নি করা সম্ভব নয়।
কারণ আপনি যখন কোথাও যাওয়ার জন্য গাড়িতে উঠবেন তখন গাড়ির ঝাকুনি ফলে আপনার পেটের কাটা জায়গায় অনেক ব্যথা অনুভব হতে পারে এছাড়াও আপনার ক্ষত শুকাতেও অনেক সময় লেগে যেতে পারে। তাই বিশেষজ্ঞ এবং ডাক্তারদের মতে একজন সিজারের রোগের সম্পূর্ণভাবে সুস্থ হয়ে উঠতে সময় লাগে প্রায় তিন মাসের মত অর্থাৎ সিজারের সেলাই শুকাতেও তিন মাস সময় লাগে।

তাই বুঝতে পারছেন আপনি যদি একজন সিজারের রোগী হয়ে থাকেন এবং আপনার যদি তিন মাস পূর্ণ হয় তাহলে আপনি যে কোন জায়গায় যাওয়ার জন্য জার্নি করতে পারবেন। এছাড়াও আপনি যদি সঠিকভাবে চলাফেরা করেন এবং ডাক্তারদের কথামতো খাওয়া-দাওয়া এবং বেল্ট পরিধান করেন তাহলে আপনার সুস্থ হতে প্রায় দেড় থেকে দুই আড়াই মাস সময় লাগতে পারে।

সিজারের পর শোয়ার নিয়ম

অনেক গর্ভবতী রয়েছে যারা সিজারের পর শোয়ার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে জানেনা যার ফলে তার বিভিন্ন রকম সমস্যা হতে পারে কারণ সে যদি আর পাঁচটা মানুষের মতো যে কোন ভাবে ঘুমায় তাহলে তার পেটে টান পড়তে পারে এবং যার ফলে পেটের ঘা অথবা সেলাই শুকাতে অনেক সময় লেগে যেতে পারে। তাই আজকে আমরা সিজারিয়ান মায়েদের সিজারের পর শোয়ার নিয়ম সম্পর্কে বলবো।

প্রতিটি মেয়ের জীবনে একবার হলেও মা হওয়ার একটি সময় আসে। আর একটি বাচ্চা জন্ম দেওয়া একজন মায়ের কাছে যেমন আনন্দদায়ক তেমনি কষ্টদায়ক একটি মুহূর্ত। সিজারের পর যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে প্রতিটা মায়েদেরকে পেন কিলার দিয়ে থাকে এতে করে ঘুম ভালো হয়। একজন সিজারিয়ানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে সঠিকভাবে শোয়ার নিয়ম জানা।
১। বাচ্চা প্রসবের পর সোজা হয়ে শুয়ে হাঁটুর নিচে একটি বালিশ নিতে হবে এতে করে পেটে কোনরকম চাপ পড়বে না এবং আপনি খুব রিল্যাক্সে ঘুমাতে পারবেন।

২। এবং বাম দিকে শোয়ার চেষ্টা করতে হবে কারণ বাম দিকে ঘুরে শুলে রক্ত সঞ্চালন এবং হজম ভালো হয় আর পেটকে সাপোর্ট দেওয়ার জন্য চাইলে একটি বালিশ ব্যবহার করতে পারেন।

৩। এবং এ সময় চেষ্টা করবেন পিঠ উঁচু রাখা এর জন্য আপনি শোয়ার সময় পিঠের পিছনে একটি বালিশ রেখে হেলানা দিয়ে শুতে পারেন। এছাড়া আপনি চাইলে ভালো হেলানা আদায়ও চেয়ারও ব্যবহার করতে পারেন।

সিজারের কতদিন পর ভারী কাজ করা যায়

সিজারের কতদিন পর সেলাই শুকায় আপনি যদি এর উত্তরটি জেনে থাকেন তাহলে আপনি খুব সহজে বুঝতে পারবেন যে সিজারের কতদিন পর ভারী কাজ করা যায়। কারণ সিজারের সেলাই সম্পন্ন না শোভানো পর্যন্ত আপনি কোন প্রকার ভারী কাজ করতে পারবেন না।

সিজার করার প্রায় এক সপ্তাহ পর আপনি সাধারণভাবে হাঁটাচলা করতে পারবেন এবং এক থেকে দেড় মাস পর আপনার পেটের সেলাইয়ের অংশটা আস্তে আস্তে শুকিয়ে যাবে। আর এ সময় আপনি চাইলে হালকা পাতলা কিছু কাজ করতে পারবেন যেমন এ সময় চাইলে আপনি আপনার বাচ্চাকে কোলে নিয়ে হাঁটাহাঁটি করতে পারবেন কোন সমস্যা হবে না।
কিন্তু আপনি যদি বাড়ি কোন কাজ করতে চান তাহলে আপনাকে প্রায় তিন মাস অপেক্ষা করতে হবে। কারণ একজন সিজারের রোগের পুরোপুরি সুস্থ হতে তিন মাস সময় লাগে। এছাড়া আপনি যদি যেকোনো ধরনের ভারী ব্যায়াম করতে চান তাহলে আপনাকে আরো তিন মাস মোট ছয় মাস অপেক্ষা করতে হবে।

কিন্তু এক্ষেত্রে ব্যায়াম করার কিছু নিয়ম রয়েছে যেমন আপনি তিন মাস পর থেকে একটু হাঁটাহাঁটি দিয়ে আস্তে আস্তে ভারী ব্যায়ামগুলো শুরু করতে পারেন একবারে হুট করে ভারী ব্যায়াম শুরু করবেন না এতে শরীরের ক্ষতি হতে পারে।

সিজারের কতদিন পর মিষ্টি খাওয়া যায়

আপনি যদি আমাদের আর্টিকেলের উপরের অংশে সিজারের কতদিন পর সেলাই শুকায় এ সম্পর্কে পড়ে থাকেন তাহলে আপনি অবশ্যই বুঝতে পারবেন যে সিজারের কতদিন পর মিষ্টি খাওয়া যায় বা যাবে। কারণ সিজারের সেলাই বা ঘা ঠিকঠাক না শুকানো পর্যন্ত আপনি কোন প্রকার মিষ্টি জাতীয় খাবার খেতে পারবেন না।
কারণ আপনি যদি মিষ্টি জাতীয় কোন কিছু খান তাহলে সেখানে ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে তাই একজন সিজারিয়ান মায়ের সিজার হওয়ার প্রায় তিন সপ্তাহ পর্যন্ত মিষ্টি জাতীয় খাবার থেকে নিজেকে দূরে রাখতে হবে।

তিন সপ্তাহ পরও যদি অপারেশনের কাটা দাগ বা ক্ষত দাগ না শুকায় তারপরেও মিষ্টি খাওয়া যাবে না। আবার অনেকে রয়েছে যাদের ডায়াবেটিস এবং ইনফেকশন জাতীয় সমস্যা থাকে এ সকল মায়েদের অতিরিক্ত মিষ্টি জাতীয় সকল খাবার থেকে এড়িয়ে চলতে হবে।

লেখকের মন্তব্য

সিজার করার কতদিন পর সেলাই শুকায় এই সম্পর্কিত আজকের এই আর্টিকেলটি যদি আপনাদের কাছে ভালো লেগে থাকে তাহলে আর্টিকেল নিতে একটি লাইক এবং কমেন্ট করুন। এবং আর্টিকেলটি অন্যান্য গর্ভবতী মায়েদেরকে শেয়ার করুন এবং তাদেরকে উপকৃত করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

rsfahim it নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url