ব্রয়লার মুরগির খামার ব্যবস্থাপনা-ব্রয়লার মুরগি পালন পদ্ধতি
আপনি যদি একটি পোল্ট্রি খামার তৈরি করতে চান তাহলে ব্রয়লার মুরগির খামার
ব্যবস্থাপনা এবং ব্রয়লার মুরগির ঔষধের তালিকা সম্পর্কে জানতে আমাদের এই
আর্টিকেলটি পড়তে হবে।
তাই আপনারা যারা একটি লাভজনক ব্রয়লার মুরগির খামার তৈরি করার চিন্তা করছেন তারা
আমাদের এই আর্টিকেলটি পড়তে পারেন।
সূচিপত্রঃ ব্রয়লার মুরগির খামার ব্যবস্থাপনা-ব্রয়লার মুরগি পালন পদ্ধতি
ব্রয়লার মুরগির খামার ব্যবস্থাপনা
আপনার অনেকেই বয়লার মুরগির ব্যবসা করতে চান কিন্তু ব্রয়লার মুরগির খামার
ব্যবস্থাপনার সম্পর্কে আপনাদের তেমন কোন ধারণা নেই যার কারণে আপনারা এখন পর্যন্ত
ব্রয়লার মুরগির ব্যবসা শুরু করতে পারছেন না।
আরো পড়ুনঃ অল্প পুজিতে খামার ব্যবসা
আসলে বর্তমান সময়ে যে লাভজনক একটি ব্যবসা হচ্ছে ব্রয়লার মুরগির খামার তৈরি করা
আপনি যদি ভাল মানের একটি ব্রয়লার মুরগির খামার তৈরি করতে পারেন তাহলে সেখানে
আপনি প্রায় কয়েক হাজার মুরগি পালন করতে পারবেন এবং এগুলো থেকে আপনি মাসে অনেক
টাকা ইনকাম করতে পারবেন।
কারণ বর্তমান বাজারে ব্রয়লার মুরগির চাহিদা অনেক বেশি বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট হোটেল
রেস্তোরাঁ ইত্যাদি জায়গায় ব্রয়লার মুরগি না ছাড়া চলে না। তাই কিভাবে একটি
সুন্দর এবং লাভজনক ব্রয়লার মুরগির খামার তৈরি করা যায় এই সম্পর্কে আমাদের সাথে
বিস্তারিত আলোচনা করব এই দয়া করে আর্টিকেলটি পুরোটা মনোযোগ সহকারে পড়বেন।
- মুরগির জন্য খামার তৈরি
ব্রয়লার মুরগির জন্য খামার দুইভাবে তৈরি করতে পারেন একটি হচ্ছে চারিদিকে টিন এবং
বাশ খুঁটি দিয়ে চারিদিকে ঘিরে মেঝেতে মুরগি পালন করতে পারেন আবার আরেকটি হচ্ছে
চারিদিকে ঘিরে উঁচু করে খাঁচার মধ্যে ঘিরেও আপনি এই ব্রয়লার মুরগি পালন করতে
পারবে।
বর্তমানে আমাদের দেশে এ দুইটি পদ্ধতিতে এখন ব্রয়লার মুরগি পালন করা হয়ে থাকে
খাঁচায় মুরগি পালন যে পদ্ধতিটা রয়েছে এটিতে একটু খরচ বেশি হয় কিন্তু মেঝেতে
মুরগি পালন করলে খুব কম খরচেই এটি করা যায়।
খামার ঘর যেভাবেই তৈরি করুন না কেন এখানে যে বায়ু চলাচল ঠিক থাকে এদিকে লক্ষ্য
রাখতে হয় সবচেয়ে ভালো হয় যদি খামার ঘরটি পূর্ব-পশ্চিম দিক করে তৈরি করেন এতে
করে বাড়ি চলাচল অনেক ভালো থাকবে। এছাড়াও খামাটিতে যেন সূর্যের আলো ভালোভাবে
প্রবেশ করতে পারে এ বিষয়টি ভালোভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে।
এবং খামার ঘরে উপরে সিলিং ফ্যানের ব্যবস্থা করতে হবে কারণ ব্রয়লার মুরগির শরীরে
অনেক বেশি তাপমাত্রা থাকে তাই এদেরকে সবসময় ঠান্ডা রাখতে ঠান্ডা রাখতে হয়।
- মুরগির জন্য খামারের ভেতরের পরিবেশ তৈরি করা
ব্রয়লার মুরগি পালনের জন্য খামারে মেঝেতে চালের অথবা কাঠের গুড়া ভালোভাবে
ছিটিয়ে দিতে হবে যাতে করে তারা ভালোভাবে থাকতে পারে এবং এবং এগুলো কয়েক সপ্তাহ
পর পর চেঞ্জ করতে হবে। এবং আপনার খামারে যদি বাচ্চা ব্রয়লার থাকে তাহলে সেগুলোকে
চেষ্টা করবেন একটু বেশি তাপমাত্রায় রাখতে এর জন্য আপনাকে ১০০ ওয়াটের লাইট গুলো
লাগাতে হবে।
আর এ লাইটগুলো শীতের সময় দিনে ২৪ ঘন্টায় জ্বালিয়ে রাখতে হবে যাতে করে মুরগি
গুলোর একটু গরম অনুভব হয় এছাড়াও খামারের চারিপাশে কয়েকটি সিলিং ফ্যান লাগাতে
হবে যাতে গরমের সময় মুরগিগুলো ঠান্ডা থাকতে পারে। এই ব্রয়লার মুরগির রোগ
প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক কম হয় এদিকে অনেক যত্নে রাখতে হয়।
- খাবার এবং পানির জায়গা
আমরা অনেকেই জানি যে ব্রয়লার মুরগির মূল খাবার হচ্ছে ফিড আর এই ফিড খাওয়ানোর
মাধ্যমে একটি ফার্মের ব্রয়লার মুরগি ছোট থেকে বড় হয়ে থাকে। ফার্মের ব্রয়লার
মুরগিকে এক ধরনের গোল পাত্রে করে ফিড দেওয়া হয় যাতে করে একটি পাত্রে অনেকগুলো
মুরগি খেতে পারে।
এবং ওই ধরনেরই আরেকটি পাত্রে করে বানিয়ে দিতে হয় যাতে করে প্রত্যেকটা মুরগি
খাওয়া শেষে পানি খেতে পারে। আপনি যদি বেশি বেশি করে মুরগিকে ফিট খাওয়ান তাহলে
মুরগি তাড়াতাড়ি বড় হবে এবং সেটিকে বাজারজাত করা যাবে।
ব্রয়লার মুরগির ঔষধের তালিকা
আপনি যদি ব্রয়লার মুরগির খামার ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে জেনে একটি খামার করার
উদ্যোগ নিয়ে থাকেন তাহলে আপনাকে অবশ্যই ব্রয়লার মুরগির ঔষধের তালিকা সম্পর্কে
জানতে হবে কারণ আপনি যদি সঠিক সময়ে ব্রয়লার মুরগিকে ওষুধ দিতে না পারেন তাহলে
আপনার মুরগি মারা যেতে পারে।
বর্তমান বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রামে এবং শহরের বিভিন্ন জায়গায় এখন অনেকেই এই
ব্রয়লার মুরগির খামার তৈরি করছে এবং এটি থেকে তারা মাসে প্রায় লাখ টাকাও ইনকাম
করছে।
তাই ব্রয়লার মুরগির ১ থেকে ৩০ দিন পর্যন্ত যে সকল ওষুধের প্রয়োজন হয় সে সকল
ওষুধের তালিকা সম্পর্কে আপনাদের সাথে আজকের এই আর্টিকেলে আলোচনা করার চেষ্টা করব
যাতে করে আপনারা মুরগির খামারে লাভবান হতে পারেন।
১ম দিন থেকে ৫ম দিনঃ গ্লুকোজ, ইলেকট্রোলাইট,ডক্সিসাইক্লিন, ভিটামিন সি,
ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, এডি৩ ই।
৬ষ্ঠ দিন থেকে ১০ম দিনঃ জিংক, ই-সেল, লিভারটনিক, ক্যালসিয়াম, এডি৩ ই,
এমক্সাসিলিন।
১১ তম দিন থেকে ১৫ তম দিনঃ এমক্সাসিলিন, ইলেকট্রিকলাইট, ভিটামিন সি, জিংক,
ক্যালসিয়াম, লিভারটনিক।
১৬ তম দিন থেকে ২০ তম দিনঃ লিভারটনিক, এমাইনো এসিড, এডি৩ ই, ক্যালসিয়াম,
জিংক।
২১ তম দিন থেকে ২৫ তম দিনঃ এমাইনো এসিড, এডি৩ ই, সিপ্রো, ইলেক্ট্রোলাইট,
ভিটামিন সি, লিভারটনিক।
২৬ তম দিন থেকে ৩০ তম দিনঃ লিভারটনিক, ক্যালসিয়াম, ই-সেল, এমাইনো
এসিড, গ্রোথ প্রমোটর।
ব্রয়লার মুরগি পালন পদ্ধতি
ব্রয়লারের খামার তৈরি করতে চাইলে আপনাকে প্রথমে ব্রয়লার মুরগির খামার
ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে জানতে হবে এবং এরপর ব্রয়লার মুরগি পালন পদ্ধতি সম্পর্কে
জানতে হবে তাহলে আপনি একটি মুরগির খামার তৈরি করতে পারবেন।
কিন্তু আপনারা হয়তো অনেকেই জানেন না যে কিভাবে একটি খামারে ব্রয়লার মুরগি পালন
করতে হয় তাই আজকের এই আর্টিকেলে আমরা এ সম্পর্কে আপনাদেরকে একটি ভালো ধারণা
দেওয়ার চেষ্টা করব।
১। ব্রয়লার মুরগি পালনের জন্য প্রথমে একটি খামারের প্রয়োজন হবে আর এই খামারটি
আপনি চাইলে ইটের অথবা টিনের করতে পারেন কিন্তু খামারটি এমন জায়গাতে করতে হবে
যাতে করে বায়ু চলাচল এবং সূর্যের আলো প্রবেশ করে।
২। এরপর মেঝেতে কাঠের অথবা চালের গুড়া ভালো হবে বেছে মুরগির জন্য সুন্দর একটি
বিছানা করতে হবে যাতে করে তারা সেখানে আরামে থাকতে পারে এবং এটিকে লিটার বলা হয়ে
থাকে আর এই লিটার কয়েকদিন পরপর পরিষ্কার করতে হবে যাতে করে কোন রোগ জীবাণু না
থাকে।
৩। এক সপ্তাহ পর পর খামার পরিষ্কার রাখার চেষ্টা করবেন এতে করে রোগ জীবাণু থেকে
মুরগিগুলো রক্ষা পাবে এবং ভালো থাকবে।
৪। শীত এবং গরম থেকে মুরগির রক্ষা করার জন্য ফ্যান এবং হাই ভোল্টেজের লাইট গুলো
লাগাতে হবে গরমের সময় ২৪ ঘন্টা ফ্যান চালু রাখতে হবে এবং শীতের সময় লাইটগুলো
যতটা পারা যায় নিচে নামিয়ে দিতে হবে।
৫। এবং বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে মুরগিগুলোকে নিয়মিত ওষুধ এবং ভ্যাকসিন দিতে
হবে এর সাথে প্রতিনিয়ত খাবারও খাবার এবং পানি দিতে হবে।
ব্রয়লার মুরগি পালন খরচ
ব্রয়লার মুরগির খামার ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে আপনানরা হয়তো বা অনেকেই জানেন কিন্তু
ব্রয়লার মুরগি পালন খরচ কত? এই সম্পর্কে কি আপনারা জানেন হয়তো বা অনেকেই জানেন
আবার অনেকেই জানেন না।তাই আজকের এই আর্টিকেলে আমরা আপনাদেরকে এ সম্পর্কে একটি
ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব।
মনে করেন আপনার মুরগির খামারে ১০০ টি মুরগি রয়েছে তাহলে ১০০ টি মুরগির জন্য কত
টাকা খরচ হবে আমি আপনাদেরকে এখন হিসাব করে দেখাবো তাহলে আপনারা একটি ধারণা
পাবেন।
বর্তমানে ব্রয়লার মুরগির প্রতি বাচ্চার দাম ৬০ টাকা করে যদি ধরা যায় তাহলে
তাহলে ১০০ টি বাচ্চার দাম প্রায় ছয় হাজার টাকা হবে এবার এই ১০০ টি বাচ্চা বড়
হতে ৩০ দিন সময় লাগবে আর এই ৩০ দিনে প্রায় ৬ বস্তার মত ফিট লাগবে। আর এই
ফিটগুলোর প্রতি বস্তার দাম যদি তিন হাজার টাকা করে ধরা যায় তাহলে ৬ বস্তার দাম
প্রায় 18 হাজার টাকা লাগবে।
এরপর আমি যদি কারেন্ট বিল মুরগির ওষুধ এবং লিটারের কথা চিন্তা করি তাহলে ১০০০
টাকা ধরতে হবে তাহলে আমার মোট খরচ হবে প্রায় ২৫ হাজার টাকার মত। তাহলে বুঝতে
পারছেন যে আপনি যদি ১০০ মুরগি নিয়ে প্রথমে শুরু করতে যান খরচ হতে পারে।
লেখকের মন্তব্য
কিভাবে একটি বয়লার মুরগির খামার তৈরি করা যায় এবং কিভাবে সেখান থেকে মাসে ভালো
পরিমাণ টাকা ইনকাম করা যায় এ সম্পর্কেই আজকেরে আটিকেলটি সাজানো হয়েছে।
তাই আপনাদের মধ্যে কোন খামারি ভাই যদি আমাদের এই আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হয়ে
থাকেন তাহলে আর্টিকেলটিতে অবশ্যই একটি লাইক এবং কমেন্ট করবেন। এবং যারা মুরগির
খামারের ব্যবসায়ী উদ্যোক্তা হতে চাই তাদের কাছে আর্টিকেলটি শেয়ার করবেন।
rsfahim it নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url