রুই মাছ চাষ পদ্ধতি এবং এর অর্থনৈতিক গুরুত্ব
আপনি যদি রুই মাছ চাষ করতে চান তাহলে আপনাকে অবশ্যই রুই মাছ চাষ পদ্ধতি এবং রুই
মাছের খাদ্য তালিকা সম্পর্কে জানতে হবে আর এ সম্পর্কে আমাদের এখানে বিস্তারিত
আলোচনা করা হয়েছে।
তাই আপনারা যারা রুই মাছ চাষ করে লাভবান হতে চান তারা আমাদের এই আর্টিকেলটি পড়তে
পারেন আশা করি আপনি রুই মাছ চাষে লাভবান হবেন।
সূচিপএঃ রুই মাছ চাষ পদ্ধতি এবং এর অর্থনৈতিক গুরুত্ব
রুই মাছ চাষ পদ্ধতি
রুই মাছ চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে আপনারা হয়তোবা বিভিন্ন ওয়েবসাইটে খোঁজাখুঁজি করছেন
কিন্তু তার পরেও কাঙ্খিত তথ্য পাচ্ছেন না তাহলে আজকের এই ব্লগটি আপনার জন্য কারণ
আজকের এই ব্লগে আমরা এই সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
আরো পড়ুনঃ নাইলোটিকা মাছের চাষ পদ্ধতি
বাংলাদেশ সহ বিশ্বের প্রায় অনেক দেশে রুই মাছ অনেক পরিচিত একটি মাছ তাই এই মাছের
বাজার চাহিদাও অনেক বেশি যার কারণে অনেকেই এই মাছটি চাষ করে খুব তাড়াতাড়ি
লাভবান হচ্ছে।
তাই আপনি যদি এই মাছটি আপনার পুকুরে চাষ করতে চান তাহলে এই মাছ চাষের যে পদ্ধতি
রয়েছে সেটি আপনাকে জানতে হবে এবং সে অনুযায়ী কাজ করতে হবে তাহলে আপনি এই মাছ
চাষে লাভবান হতে পারবেন। তাই চলুন দেরি না করে জেনে নেওয়া যে কিভাবে রুই মাছ
চাষ করতে হয়।
- পুকুর নির্বাচনঃ
রুই মাছ চাষের জন্য অপেক্ষাকৃত ভাবে বড় আকারের পুকুর প্রায় ৪০% হতে হবে। এবং
চার থেকে ছয় ফুটের মধ্যে পানি থাকতে হবে। মাটি এঁটেল অথবা দোআঁশ হয়াই উত্তম।
- পুকুর প্রস্ততিঃ
রুই মাছ চাষের জন্য ভালো এবং বড় পুকুর নির্বাচন করার পর সেই পুকুরের পাড় গুলো
ভালোভাবে মেরামত করতে হবে। এবং পুকুরের আশেপাশে গাছপালা ডালপালা গুলো কেটে ফেলতে
হবে যাতে করে পুকুরে সূর্য আলো পড়া বাধাগ্রস্ত না হয়।
কারণ সূর্যের আলো পুকুরে পড়তে বাধা গ্রস্থ হলে মাছের প্রাকৃতিক খাদ্য তৈরি হতে
বাধাগ্রস্ত হয়। তাই এ সকল দিকগুলো খেয়াল করতে হবে
- জলজাগাছা ও রাক্ষসী মাছ দূর করাঃ
পুকুরে অনেক অপ্রয়োজনীয় উদ্ভিদ শেওলা থাকে যা মাছের প্রাকৃতিক এবং পরিপূরক
খাদ্যতে বাধাগ্রস্ত করে। তাই এই আগাছা উদ্ভিদগুলোকে পুকুর থেকে নিষ্কাশন করতে
হবে। এছাড়াও পুকুরে অনেক ক্ষতিকারক মাছ থাকে যেমন মাগুর শরীর টেংরা ইত্যাদি
যেগুলো রুই মাছের পোনা খেয়ে ফেলতে পারে। তাই এই মাছগুলোকে পুকুরের জাল টেনে অথবা
বিষ প্রয়োগ করে মেরে ফেলতে হবে।
- চুন প্রয়োগঃ
পুকুরের পানির গুনাগুন ঠিক রাখতে প্রতিনিয়ত চুন প্রয়োগ করতে হবে যাতে করে রুই
মাছের কনো খতি না হয়।
- সার প্রয়োগঃ
মাছের যদি প্রাকৃতিক খাদ্যের পাশাপাশি সম্পূরক খাদ্যের প্রয়োজন হয় সে সময়
পুকুরের পানিতে পরিমাণমতো জৈব অজৈব এবং টিএসপি সার প্রয়োগ করতে হবে। এতে করে
মাছের দৈহিক ওজন বৃদ্ধি পাবে।
- পোনা মজুদঃ
পুকুর ভালো হবে নির্বাচন এবং প্রস্তুত করা হলে পুকুরে রুই মাছের ছোট ছোট পোনা
ছাড়তে হবে। এই পোনা গুলো পানিতে ছাড়ার আগে পুকুরের পানি আরেকবার পরীক্ষা করতে
হবে। সেটা হল পুকুরের পানি একটি কাঁচের গ্লাসে নিয়ে সেই গ্লাসটি সূর্যের আলোর
দিকে ধরতে হবে যদি পানি বেশি সবুজ অথবা ঘোলাটে মনে হয় তাহলে বুঝতে হবে পানিতে
প্রাকৃতিক খাদ্য রয়েছে।
আর যদি পানি পরিষ্কার মনে হয় তাহলে মনে করতে হবে যে পানিতে প্রাকৃতিক খাদ্যের
পরিমাণ। পানিতে সার প্রয়োগ করে এটি ঠিক করতে হবে তারপর পোনা ছাড়তে হবে।
রুই মাছের খাদ্য তালিকা
আপনি যদি রুই মাছ চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চান এবং রুই মাছ চাষ করতে চান তাহলে
আপনাকে অবশ্যই প্রথমে রুই মাছের খাদ্য তালিকাগুলো কি কি এ সম্পর্কে জানতে হবে।
লাভজনকভাবে রুই মাছ চাষের জন্য প্রয়োজন হল মানসম্মত খামার।
কারণ মাছ চাষে প্রায় ৭০% এর বেশি খরচ হয় খাদ্য সরবরাহে।রুই মাছ চাষের জন্য অধিক
পরিমাণে পুকুরে সম্পূরক খাদ্য প্রয়োগ করতে হবে যার ফলে মাছের ওজন বৃদ্ধি হবে।
রুই মাছের খাদ্য তালিকায় রয়েছে চালের গুড়া গমের গুঁড়া খোল ইত্যাদি। এগুলো
মাছের শারীরিক বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
এছাড়াও এগুলো প্রতিদিন প্রায় তিন বেলা করে এই খাবারগুলো পুকুরের চারিদিকে
ভালোভাবে ছিটিয়ে দিতে হবে। প্রয়োজনে একটি বস্তা অথবা ব্যাগে এই খাবারগুলো পুড়ে
পুকুরের একপাশে ঝুলে ধুতে হবে যাতে করে মাছগুলো খাবারগুলো খেতে পারে। আর এই সকল
বাইরে থেকে মাছকে খাবার দেওয়াকে বলে সম্পূরক খাদ্য।
শুধু সম্পূরক খাদ্য দিলে হবে না উপরে যাতে প্রাকৃতিক খাদ্যের পরিমাণ ঠিক থাকে সেই
দিকে লক্ষ্য করতে হবে। এর জন্য প্রয়োজনে পুকুরের চারিপাশের গাছপালা কেটে ফেলতে
হবে যাতে করে সূর্যের আলো পানিতে পড়তে কোন বাধা সৃষ্টি না হয়।
এবং প্রয়োজনে পানিতে জৈব সার প্রয়োগ করতে হবে যার ফলে পানিতে বিভিন্ন রকম
উদ্ভিদ শ্যাওলা ইত্যাদি তৈরি হয় যেগুলো মাছের প্রাকৃতিক খাদ্য। আর এই ভাবেই রুই
মাছের খাদ্য তালিকাটা ঠিক রাখতে হবে।
রুই মাছের বৈশিষ্ট্য
রুই মাছ চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানার আগে আপনাকে প্রথমে রুই মাছের বৈশিষ্ট্য গুলো
কি কি এ সম্পর্কে জানতে হবে। বাংলাদেশ হল একটি নদীমাতৃক দেশ নদী ছাড়াও এদেশে
রয়েছে অসংখ্য রকমের ছোট বড় পুকুর খাল বিল ইত্যাদি।
এবং এগুলোতে রয়েছে অসংখ্য রকমের মাছ। তেমনি রুই মাছ হলো আমাদের দেশের অনেক
জনপ্রিয় সুপরিচিত একটি নাম।Labeo rohita হচ্ছে রুই মাছের বৈজ্ঞানিক নাম এবং এর
ইংরেজি নাম হচ্ছে Rohu Carp।
আইঁশ জাতীয় দেহবড়ে পটকা থাকে তাদেরকে কার্প মাছ বলে। বাংলাদেশে প্রায় বড়
ধরনের তিনটি কার্প জাতীয় প্রজাতির মধ্যে সবচেয়ে ভালো হলো রুই মাছ এটি সাধু
পানিতে চাষ করা হয়ে থাকে। এটি বাংলাদেশে অনেক জনপ্রিয় একটি মাছ। রুই মাছ দ্রুত
বর্ধনশীল এবং বেশ লম্বা আর ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রাম ওজন বিশিষ্ট হয়।
রুই মাছ অন্যান্য মাছের চেয়ে শতকরা ৩০ ভাগ দ্রুত বাড়ে তাই এ মাছ চাষে সময় কম
লাগে ফলে লাভ এবং চাহিদা বেশি। এটি দেখতে কিছুটা কালো এবং ধূসর সাদা। এটি আশ অনেক
কালো এবং পিচ্ছিল হয়ে থাকে। এ মাছে প্রচুর পরিমাণ তেল থাকে। এ মাছ বাংলাদেশ ভারত
পাকিস্তান মিয়ানমার নানা জায়গায় এদের বসতি।
রুই মাছের অর্থনৈতিক গুরুত্ব
আপনি যদি রুই মাছ চাষ পদ্ধতি গুলো সম্পর্কে জেনে ঠিক মত রুই মাছ চাষ করতে পারেন
তাহলে আপনি এটি থেকে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবেন তাই আজকে আমরা রুই মাছের
অর্থনৈতিক গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা করব।
বাংলাদেশের সবচেয়ে লাভজনক একটি ব্যবসা হচ্ছে মৎস্য চাষ বা মাছ চাষ। এই মাছ চাষের
ভিতরে সবচেয়ে লাভজনক মাছ হল রুই মাছ। এটিতে খরচ কম এবং লাভ বেশি হয়ে থাকে। এটি
যেকোন রকম খাল বিল পুকুর ইত্যাদি জায়গায় চাষ করা যায়।
এটির পুন অবস্থায় অনেক ছোট থাকে এবং পুকুরে ছাড়ার পর এটি প্রায় চার থেকে পাঁচ
কেজি ওজনেরও হয়ে থাকে যার ফলে এর বাজার দামও অনেক বেশি হয়ে থাকে। এই মাছ চাষ
করে বাংলাদেশের প্রায় অনেক মানুষই আজ স্বাবলম্বিন হয়েছেন এবং তারা নিজে ইনকাম
করছে। যার ফলে বাংলাদেশে অর্থনীতিতে এর অনেক ভালো প্রভাব পড়ছে।
এটা শুধু বাংলাদেশই নয় বাংলাদেশ সহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হচ্ছে এবং যার ফলে
বাংলাদেশে আসছে অনেক পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা। এবং অনেক মানুষের এর ফলে কর্মসংস্থান
হচ্ছে। তারা অল্প খরচে মাছ চাষ করে বছরে অধিক টাকা আয় করছে। তাই বলা যায় যে
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে রুই মাছের গুরুত্ব অনেক বেশি।
রুই মাছের উপকারিতা
রুই মাছ খেতে যেমন সুস্বাদু তেমনি এই রুই মাছের উপকারিত রয়েছে অনেকগুলো
বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় মাছ হচ্ছে রুই মাছ। এটির পুষ্টিগুণ উৎপাদনে ও
উপকারিতা অনেক গুণ বেশি। রুই মাছে উচ্চগণ সম্পন্ন প্রোটিন আয়োডিন ভিটামিন
মিনারেল ভরপুর রয়েছে।
আরো পড়ুনঃ বসন্ত হলে করণীয় গুলো কি কি জানুন
রুই মাছের মধ্যে ওমাগো থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে যা শরীর এবং মস্তিষ্কের বিকাশে
সাহায্য করে এবং বিভিন্ন ধরনের রোগ প্রতিরোধকে সাহায্য করে।
রুই মাছে ভিটামিন সি এবং ভিটামিন ডি বেশি পরিমাণে থাকে যা হাড়ের বৃদ্ধি করে এবং
এন্টি অক্সাইড তৈরি করে। রুই মাছে থাকা EPA এবং DHAরক্ত চন্ডিত হতে সাহায্য করে।
ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণ করে। ডায়াবেটিস রোগীর সাধারণত ভিটামিন ডি এর অভাবে
হবে। রুই মাছের মধ্যে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ডি থাকে যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ
করে।
বয়স্ক মানুষদের অনেক রকম রোগ দেখা যায় যেমন চোখে কম দেখা, আহার ক্ষয় হয়ে
যাওয়া, ইত্যাদি রোগের জন্য রুই মাছের তেল অনেক গুরুত্বপূর্ণ এটি তাদের এসব রোগ
থেকে রক্ষা করতে পারে।
এছাড়াও দুই মাসে পুঁজি পরিমাণ ভিটামিন এবং মিনারেলস থাকায় এটি ত্বকের খসখসে ভাব
থেকে রক্ষা করে। প্রতিদিন একপিস কৈ মাছ হার্ট অ্যাটাক এবং ট্রাকের ঝুঁকি ১৫%
কমিয়ে দেয়। এছাড়াও এতে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম থাকে যা হাড়ের জন্য অনেক
গুরুত্বপূর্ণ।
লেখকের মন্তব্য
আমরা এই পাঠে রুই মাছের চাষ পদ্ধতি এবং এই মাসের কিছু উপকারিতা সম্পর্কে আপনাদের
মাঝে তুলে ধরেছি। তাই এই পাঠটি পড়ে আপনি যদি উপকৃত হন তাহলে এটি অন্যকে শেয়ার
করে তাকেও উপকৃত করুন।
rsfahim it নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url