হাঁস পালনের জনপ্রিয় পদ্ধতি কোনটি? বিস্তারিত জানুন
আপনি কি হাঁস পালন করতে চান? তাহলে আপনাকে অবশ্যই হাঁস পালনের জনপ্রিয় পদ্ধতি
কোনটি এবং কোন জাতের হাঁস পালন লাভজনক এ সম্পর্কে জানতে হবে। আর এই সম্পর্কে
আমাদের এই আর্টিকেলে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
তাই আপনারা যারা হাঁস পালনে আগ্রহী আছেন তারা আমাদের এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণটা
মনোযোগ সহকারে একবার পড়বেন আশা করি আপনি উপকৃত হবেন।
সূচিপত্রঃ হাঁস পালনের জনপ্রিয় পদ্ধতি কোনটি? বিস্তারিত জানুন
হাঁস পালনের জনপ্রিয় পদ্ধতি কোনটি
হাঁস পালনের জনপ্রিয় পদ্ধতি কোনটি এ সম্পর্কে আপনারা হয়তোবা অনেকেই জানেন না
যার কারণে এখন পর্যন্ত আপনার হাঁস পালন শুরু করতে পারছেন না।
আরো পড়ুনঃ আধুনিক পদ্ধতিতে গরুর খামার
বর্তমানে অনেকভাবে হাঁস পালন করা যায় যেমন আবদ্ধ পদ্ধতি, অর্ধ আবদ্ধ পদ্ধতি,
উন্মুক্ত পদ্ধতি এবং ভাসমান পদ্ধতি এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি পদ্ধতি
হচ্ছে ভাসমান পদ্ধতি এ পদ্ধতিতে আপনি খুব সহজেই কোনো ঝামেলা ছাড়াই হাঁস পালন
করতে পারবেন এবং অধিক লাভবান হতে পারবেন। তাই চলুন জেনে নেওয়া যাক যে কিভাবে
অসংখ্য পদ্ধতিতে হাঁস পালন করতে হয়।
ভাসমান পদ্ধতিতে হাঁস পালনঃ বর্তমানে বাংলাদেশে অনেক মানুষ হয়েছে যারা
এখন এই ভাসমান পদ্ধতিতে হাঁস পালন করছে এবং লাভবান হচ্ছে। এই পদ্ধতিতে হাঁস পালন
করার জন্য আপনাকে প্রথমে যে কোন জলাশয় যেমন পুকুর, খাল বিল নদী নালা ইত্যাদির
উপরে বাসের মাচা অথবা বড় বড় ড্রাম দিয়ে ভাসমান একটি হাঁসের ঘর তৈরি করতে
হবে।
এ পদ্ধতিতে হাঁস পালন এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে হাঁসগুলো খুব সহজেই তাদের
ইচ্ছা মতো পানিতে চলাফেরা করতে পারবে এবং পানিতে থাকে বিভিন্ন পোকা মাছ শামুক
ইত্যাদি খেতে পারবে আর এর ফলে হাঁসগুলো তাড়াতাড়ি বৃদ্ধি পাবে। এ পদ্ধতি যেহেতু
হাঁসগুলো বাইরে থেকেই বেশিরভাগ খাবার গ্রহণ করবে তাই হাঁসের পিছনে আপনার খাবারের
খরচটা অনেকটা কমে আসবে।
কোন জাতের হাঁস পালন লাভজনক
হাঁস পালনের জনপ্রিয় পদ্ধতি কোনটি এ সম্পর্কে আপনারা অনেকে জেনেছেন কিন্তু হাঁস
পালনের জন্য শুধু এই জিনিসটি জানলে হবে না তার সাথে আপনাকে জানতে হবে যে কোন
জাতের হাঁস পালন লাভজনক বেশি।
মানুষ দুইটি কারণে হাঁস পালন করে থাকে একটি হচ্ছে হাঁসের ডিম সংগ্রহ করা ডিম
বিক্রি করা এবং আরেকটি হচ্ছে হাঁসের মাংস বৃদ্ধি করা হাঁস বিক্রি করা। তাই আজকে
আমরা এই আর্টিকেলে আপনাদেরকে জানাবো যে কোন জাতের হাঁস গুলো বেশি ডিম দেয় এবং
খুব তাড়াতাড়ি মাংস বৃদ্ধি হয়।
ডিমের জন্য সবচেয়ে ভালো জাতের হাঁসঃ ডিম দেয় এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভালো
জাতের হাঁস হচ্ছে খাঁকি ক্যাম্বেল এই হাঁসটি অনেক দিন দিয়ে থাকে তাই আপনার যদি
উদ্দেশ্যে থাকে হাঁসের ডিম বিক্রি করবেন তাহলে আপনাকে অবশ্যই এই খাঁকি ক্যাম্বেল
যাতে এগুলোকে সংগ্রহ করতে হবে।
এ হাঁসের গায়ের রং পুরোই খাকি অথবা বাদামি রঙের হয়ে থাকে কিন্তু সাদা রঙেরও
খাঁকি ক্যাম্বেল ও রয়েছে। এ হাঁসগুলো কয়েক মাস ডিম দেয়ার পর 20 থেকে 15 দিন
রেস্ট নেই এবং এরপর আবার এরা ডিম দেওয়া শুরু করে এভাবে করে এরা প্রায় দুই বছর
পর্যন্ত ডিম দিয়ে থাকে দুই বছর পর আর সেভাবে ডিম দেয় না এ সময় আপনি চাইলে
এগুলোকে বেচে দিয়ে আবার নতুন কিনতে পারবেন।
মাংসের জন্য সবচেয়ে ভালো জাতের হাঁসঃ মাংসের জন্য বর্তমান সবচেয়ে ভালো
হাঁসের জাত হচ্ছে বেইজিং হাঁস এই হাঁসটি মূলত বেশিরভাগ মাংসের জন্যই ব্যবহার করা
হয়েছে। এ হাঁসটি দেখতে সাদা বর্ণের হয় এবং আপনি যদি হাঁসটি ঠিকঠাকভাবে পরিচালনা
করেন এবং খাবার দেন তাহলে এটি প্রায় 40 দিনে 2 কেজি ওজন হয়ে যাবে এবং আপনি এটি
বিক্রি করতে পারবেন।
হাঁস পালন পদ্ধতি
হাঁস পালন পদ্ধতি কি? বা কিভাবে কোন কোন মাধ্যমে হাঁস পালন করা যায় এ সম্পর্কে
আপনারা হয়তো অনেকেই ঠিকমতো জানেন না তাই আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদেরকে কয়েকটি
মাধ্যম সম্পর্কে জানাবো যেগুলোর মাধ্যমে আপনারা সহজেই হাঁস পালন করতে পারবেন এবং
লাভবান হতে পারবেন। হাঁস পালনের জন্য চারটি পদ্ধতি রয়েছে আর তা হলোঃ
- উন্মুক্ত পদ্ধতি
- অর্ধ আবদ্ধ পদ্ধতি
- আবদ্ধ পদ্ধতি
- ভাসমান পদ্ধতি
উন্মুক্ত পদ্ধতিঃ উন্মুক্ত অবস্থায় হাঁস পালন পদ্ধতি আমরা বেশিরভাগ সময়
গ্রামের দিকে দেখে থাকি গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে সকালে হাঁস এগুলোকে খাঁচা থেকে
বের করা হয় এবং এ হাঁস গুলো সারাদিন বাইরে বিভিন্ন ধানের ক্ষেতে ধান এবং পুকুর
করে শামুক ছোট মাছ ইত্যাদি খেয়ে থাকে যার কারণে এদেরকে তেমন কোন খাবার দিতে হয়
না।
এবং এ হাঁস গুলো সারাদিন বাইরে উন্মুক্ত অবস্থায় থাকে আর সন্ধ্যা নামলে আবার
খাঁচায় ঢুকে পড়ে আর এ পদ্ধতিতে আপনি যদি হাঁস পালন করতে পারেন তাহলে আপনার হঁসে
তেমন কোন খরচ হবে না বরং অনেক বেশি লাভ হবে। কিন্তু এ পদ্ধতিতে হাঁস পালন করলে
আপনাকে অবশ্যই হাঁস কোথায় যাচ্ছে এদিকে খেয়াল করতে হবে নয়তো হাঁস চুরি হওয়ার
সম্ভাবনা থাকতে পারে।
অর্ধ আবদ্ধ পদ্ধতিঃ হাঁস পালনের আরেকটি সবচেয়ে ভালো পদ্ধতি হচ্ছে অর্ধ
আবদ্ধ পদ্ধতি এ পদ্ধতিতে হাঁস পালনের সুবিধা অনেক বেশি। এ পদ্ধতিতে হাঁসকে সকালে
খাজা থেকে বের করে একটি বাউন্ডারির মধ্যে রাখা হবে হাঁসগুলো এ বাউন্ডারি বাইরে
যেতে পারবে না এবং যার ফলে হাঁস গুলো সারাদিন এই বাউন্ডারির মধ্যেই থাকবে।
আরো পড়ুনঃ ব্রয়লার মুরগির খামার ব্যবস্থাপনা
এ পদ্ধতিতে কোন কোন বন্য পশু প্রাণী অথবা চুরির হাত থেকে আজকে খুব সহজে রক্ষা করা
যায় এবং খোলামেলাভাবে হাঁস পালন করাও যায়। তাই আপনার যদি অনেক বড় জায়গা থাকে
তাহলে আপনি এ পদ্ধতিতে হাঁস চাষ করতে পারেন।
আবদ্ধ পদ্ধতিঃ বর্তমান সময়ের সবচেয়ে বেশি যে পদ্ধতিতে হাঁস পালন হয়ে
থাকে সেটি হচ্ছে আবদ্ধ পদ্ধতি একটি মুরগিকে যেভাবে খামারে সারাদিন রাখা হয় এবং
সেখানে খাবার দেওয়া হয় এ পদ্ধতিতে হাঁসকেও একইভাবে সারাদিন খামারে রেখে তাকে
খাবার পানি ইত্যাদি দেওয়া হয়।
এ পদ্ধতিতে হাঁস চাষের খরচ অনেক বেশি হয় কারণ যেহেতু হাঁসগুলো বাইরে যেতে পারে
না তাই তার সকল খাবারের যোগান দিতে হয়। এছাড়াও আবদ্ধ পদ্ধতিতে যেহেতু হাঁস
পানিতে সাঁতার কাটতে পারে না যার কারণে তার শরীর খুব একটা বৃদ্ধি পায়নি।
ভাসমান পদ্ধতিঃ হাঁস পালনের জনপ্রিয় পদ্ধতি কোনটি আপনাকে যদি জিজ্ঞেস করা
হয় তাহলে আপনি নিঃসন্দেহে বলতে পারেন যে ভাসমান পদ্ধতি।
কারণ বর্তমানে অনেক মানুষ হয়েছিল যারা বিভিন্ন খাল বিল অথবা নদী-নালা উপরে মাচা
তৈরি করে হাঁসের খামার তৈরি করছে এতে করে হাস সহজে পানি সংমিশ্রণে আসতে পারছে এবং
পানি থেকে বিভিন্ন রকম শামুক ছোট মাছ ইত্যাদি খেতে পারছে যার ফলে তার শরীর অনেক
বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ পদ্ধতিতেও যেহেতু হাত সারাদিন পানিতে থাকে তাই এ পদ্ধতিতেও খরচ
অনেক কম হয়।
উন্মুক্ত পদ্ধতিতে হাঁস পালনের সুবিধা
হাঁস পালনের জনপ্রিয় পদ্ধতি কোনটি এ সম্পর্কে আমরা উপরের অংশ বিস্তারিত আলোচনা
করেছি তাই এবার উন্মুক্ত পদ্ধতিতে হাঁস পালনের সুবিধা গুলো কি কি এই সম্পর্কে
আমরা আর্টিকেলের এই অংশে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করুন।
উন্মুক্ত পদ্ধতিতে পালন বলতে বোঝায় সকালে হাঁস গুলোকে খাঁচা থেকে বের করা হয়
এবং এ হাঁস গুলো সারাদিন বাইরে বিভিন্ন ধানের ক্ষেতে ধান এবং পুকুর করে শামুক ছোট
মাছ ইত্যাদি খেয়ে থাকে যার কারণে এদেরকে তেমন কোন খাবার দিতে হয় না।
আরো পড়ুনঃ ই-কমার্স ব্যবসার নিয়ম
এছাড়াও এই পদ্ধতিতে হাঁস পালনে বাড়তি কোন লোকের প্রয়োজন হয় না এবং খুব একটা
দেখাশোনারও প্রয়োজন পড়ে না যার কারণে এই পদ্ধতিতে হাঁস পালনে লাভ অনেক বেশি।
বিশেষ করে গ্রাম অঞ্চলের অনেক মানুষ এ পদ্ধতিতে হাস করে থাকে। এছাড়া উন্মুক্ত
অবস্থায় আজ চলাফেরা করলে এদের দৈহিক বৃদ্ধি অনেক ভালো হয়।
হাঁস পালনে আয় ব্যয়
আপনারা অনেকেই হাঁস পালনে আগ্রহী আছেন কিন্তু হাঁস পালনে আয় ব্যয় কেমন হয় এ
সম্পর্কে না জানার কারণে আপনার হাঁস পালনে খুব একটা সাহস পাচ্ছেন না তাই আজকের
আর্টিকেলে আমরা আপনাদেরকে পাঁচশ হাঁস দিয়ে বুঝাবো যে ৫০০ হাঁসে কেমন লাভ
হয়।
আপনি যদি ডিম পালনের জন্য খাকি ক্যাম্বেল যাতে 500 হাঁস কিনেন তাহলে এই 500
হাঁসের খাদ্য খরচ প্রতিদিন দুই হাজার টাকা করে আপনার লাগবে তাহলে এরা ঠিকমতো ডিম
দিবে। এবার পাঁচশ হাঁস যদি প্রতিদিন একটি করে ডিম দেয় তাহলে আপনার 500 ডিম হবে
আর প্রতিটি ডিম যদি ১৫ টাকা করে ধরা হয় তাহলে 500 ডিম থেকে আপনি প্রতিদিন ৭৫০০
টাকা পাবেন।
আর এই ৭৫০০ টাকা থেকে দুই হাজার টাকা বাদ দেন তাহলে আপনার ৫৫০০ টাকা থাকে। আর এই
৫৫০০ টাকাকে আপনি যদি ৩০ দিয়ে গুণ দেন তাহলে আপনার সব খরচ বাদ দিয়ে প্রতি মাসে
হাঁসের ডিম বিক্রি করেই এক লক্ষ 65 হাজার টাকা ইনকাম হবে। তাহলে বুঝতেই পারছেন
হাঁস পালনে কেমন লাভ এবং ব্যয় কেমন হয়।
শুধু লাভ দেখলেই হবে না আপনি যদি এই ব্যবসা প্রথমে শুরু করতে যান তাহলে হয়তো বা
আপনি প্রথমে খুব একটা লাভ করতে পারবেন না আস্তে আস্তে আপনি যখন বুঝতে পারবেন তখন
আপনার লাভ হবে।
এছাড়া আপনি যদি মাংসের জন্য হাঁস পালন করতে চান তাহলেও তাহলে আপনার ব্যয় এমনই
হবে কিন্তু লাভ তুলনামূলক কম হতে পারে কারণ একটা হাঁস বাচ্চা থেকে বড় হতে প্রায়
চার থেকে পাঁচ মাস সময় লাগে আর যার পাঁচ মাসে একটা হাঁসের ওজন খুব বেশি হলে তিন
থেকে সাড়ে তিন কেজি হবে।
লেখকের মন্তব্য
যারা নতুন হাঁসের খামারি রয়েছেন বা হাঁসের খামার তৈরি করবেন ভাবছেন তাদের জন্য
হাঁস পালন পদ্ধতি সম্পর্কে আজকের এই আর্টিকেলটি সাজানো হয়েছে তাই আজকের এ
আর্টিকেলটি করে আপনারা যদি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে আর্টিকেলটিতে একটি লাইক এবং
কমেন্ট করবেন।
rsfahim it নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url