পশু কোরবানি করার ফজিলত এবং নিয়ম
আপনি যদি পশু কোরবানি করার ফজিলত এবং গরু ছাগল জবাই করার নিয়ম সম্পর্কে না জেনে
থাকেন তাহলে আমাদের এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য। এই আর্টিকেলে আমরা পশু কোরবানি
করার সকল নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা করেছি।
তাই আপনি যদি পশু কোরবানি করার ফজিলত এবং নিয়ম সম্পর্কে সঠিক তথ্য পেতে চান
তাহলে আমাদের আর্টিকেলটি পুরোপুরি পড়ুন।
সূচিপএঃ পশু কোরবানি করার ফজিলত এবং নিয়ম
পশু কোরবানি করার ফজিলত
কোরবানি ঈদে পশু কোরবানি করার ফজিলত অনেক বেশি যার ফলে আল্লাহতালা প্রতিটি সামর্থ্যবান ব্যক্তির উপর পশু কোরবানি ওয়াজিব করেছেন। কোরবানি হচ্ছে আরবি শব্দ যার অর্থ হচ্ছে কোন কিছু ত্যাগ করা।
আরো পড়ুনঃ ইফতারে কি খাওয়া উচিত
আল্লাহতালার সন্তুষ্টি অর্জন করার জন্য এবং নৈকট্য লাভ করার জন্য কোন হালাল
পশুকে আল্লাহতালার উদ্দেশ্যে জবাই করাক কোরবানি করা বলা হয়ে থাকে। এটি অনেক এটি
প্রায় নবী রাসূলের যুগ থেকে হয়ে আসছে।
আমরা সবাই হযরত ইসমাইল (আঃ) ইতিহাস জানি হযরত ইসমাইল (আঃ) এর পিতা হযরত
ইব্রাহিম (আঃ) একদিন স্বপ্নে দেখে তার পুত্র ইসমাইল কে সে আল্লাহর নির্দেশে
জবাই করছে। এটি দেখার পর সে ইসমাইলকে একটি খোলা মাঠে নিয়ে যাই জবাই করার
উদ্দেশ্যে।
কিন্তু যখনই ইসমাইলকে জবাই করার জন্য তার পিতা চাকু চালাই সে মধ্যেই আল্লাহ
তায়ালার নির্দেশে ইসমাইলের জায়গায় একটি দুম্বা কোরবানি হয়ে যায়। তারপর
থেকে শুরু করে প্রতিটি মানুষের উপরে আল্লাহতালা কোরবানি ওয়াজিব করে দেয়।
আল্লাহতালা বলেন মানুষ জাতি যখন কোন পশু কোরবানি করে তখন তাদের তাকওয়া আমার
কাছে চলে আসে।
কোরবানি করার মাধ্যমে প্রতিটা মুসলিম সম্প্রদায় আল্লাহ তায়ালার কাছে নিজের
গুনা গুলোকে মাফ করে নিতে পারে। তাই পরিশেষে বলা যায় যে পশু কুরবানী করা
প্রতিটা মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য ওয়াজিব একটি এবাদত সামর্থ্য থাকলে প্রতিটা
মুসলিমকেই এই ইবাদতটি পালন করতে হবে।
ছাগল জবাই করার নিয়ম
পশু কোরবানি করার ফজিলত সম্পর্কে আপনারা ইতিমধ্যে ওপরের অংশে পড়ে বুঝতে
পেরেছেন কুরবানি ঈদে প্রতিটা সামর্থ্যবান ব্যক্তির জন্য একটি হালাল
পশুর কুরবানি করা ওয়াজিব।
আর তাই কোরবানি করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি যে পশুটি ব্যবহার করা হয়ে
থাকে তা হল গরু এবং ছাগল। ইসলামের দৃষ্টিতে এই দুইটি পরশুই হালাল পশু তাই কোন
সন্দেহ ছাড়াই এই দুইটি পশু কোরবানির জন্য যথেষ্ট উপযুক্ত।
আরো পড়ুনঃ সেহরিতে খাবারের তালিকা
আমরা অনেকেই গরু এবং ছাগল জবাই করার নিয়ম সম্পর্কে জানিনা। তাই আজকে আমরা
ছাগল কোরবানি করার সকল নিয়ম সম্পর্কে জানব।
১। ছাগল যেহেতু ছোট একটি পশু তাই এটি কোরবানির জন্য জবাই করতে বেশি মানুষ
প্রয়োজন হয় না তিন থেকে চারজন মানুষ হলেই এটি জবাই করা যায়।
২। প্রথমে কিবলামুখী অর্থাৎ পশ্চিম দিকে মুখ করে ছাগলটিকে শোয়াতে হবে। এবং
শোয়ানোর সময় কোনরকম কিল ঘুসি দেওয়া যাবে না।
৩। এবং জবাই করার জন্য যে চুরি ব্যবহার করা হবে সেটি পর্যাপ্ত পরিমাণ ধারালো
হতে হবে যাতে করে পশুটি কোন কিছু বুঝে ওঠার আগেই জবাই করা হয়ে যায়। কারণ কোন
পশুকে এমনভাবে জবাই করতে হবে যাতে করে সে কষ্ট না পায়।
৪। গলায় ছুরি চালানোর আগে বিসমিল্লাহ অথবা অন্যান্য সূরা পড়তে হবে। জবাই করার
পর চাকুর আগা দিয়ে কোনরকম গুতা মারা যাবে না এতে করে পশুটি ব্রেন স্টক করে
মারা যেতে পারে।
৫। জবাই করার পর চার পায়ের রগ গুলো কেটে দিতে হবে এতে করে পশুটির জবাই করা
নিশ্চিত হয়।
পশু জবাই করার সময় মাথা কোন দিকে থাকবে
গরু জবাই করার পদ্ধতি
আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষই কোরবানির সময় গরু কোরবানি দিয়ে থাকে। কারণ গুরু
আকারে অনেক বড় হয়ে থাকে যার ফলে এটি কয়েক ভাগে কোরবানি দেওয়া যায়। গরু
আকারে অনেক বড় হয় এবং শক্তিশালী হওয়ায় অনেকেই কোরবানির সময় গরুকে জবাই
করতে গিয়ে হিমশিম খেয়ে থাকে।
তাই আমরা আজকে আপনাদেরকে গরু জবাই করার পদ্ধতি সম্পর্কে বলে দেব যেগুলোর
মাধ্যমে আপনারা খুব সহজেই কোরবানির সময় খুব সহজেই গরু জবাই করতে পারবেন।
আরো্ পড়ুনঃ ২০২৪ সালের রোজার ঈদ কত তারিখে
১। অনেকে আছে কোরবানির সময় গরুর সামনে ধারালো ছুরি চাকু ইত্যাদি রেখে দেয় এবং
এগুলো ধার এর ফলে গরু অনেক উত্তপ্ত হয়ে যেতে পারে।
২। গুরু যেহেতু অনেক বড় একটি পশু তাই এটিকে জবাই করার জন্য সাত থেকে আট জন
মানুষ প্রয়োজন হবে। এবং গুরু চারটি পা দড়ি দিয়ে ভালোভাবে বেঁধে ফেলতে হবে
যাতে করে সে লাফাতে না পারে।
৩। যখন চারটি পা ভালোভাবে বাধা হয়ে যাবে তখন কয়েকজন মিলে গরুর দিকে ধাক্কা
দিলেই এটি মাটিতে লুটিয়ে পড়বে। আর যদি বেশি রাগী গরু হয় তাহলে গরুর নাকে
অবশ্যই একটি লাগাম দিয়ে রাখবেন এতে করে গরুর শক্তি অনেক কমে যায়।
৪। এবং এরপর বিসমিল্লাহ বলে গরুকে ধারালো একটি অস্ত্র দিয়ে জবাই করতে হবে এই
সময় ভালোভাবে গরুকে আঁকড়ে ধরতে হবে। কারণ এ সময় গরু বেশি হাত-পা ছাড়বে।
কোরবানি করার সঠিক নিয়ম
আর যদি কোরবানি ঈদে পশু কোরবানি করার ফজিলত পেতে চান তাহলে আপনাদেরকে পশু
কোরবানি করার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে জানতে হবে কারণ আপনি যদি সঠিক নিয়মে বা
হাদিস অনুযায়ী পশু কোরবানি না করেন তাহলে আপনি এটির সঠিক ফজিলত পাবেন না।
পশু কোরবানি করা প্রতিটা মুসলিম সম্প্রদায়ের নারী এবং পুরুষ উভয়ের জন্য
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং ফজিলতপূর্ণ একটি কাজ।তাই আমরা সবাই কোরবানি ঈদের দিন
সকালে ঘুম থেকে উঠেই আল্লাহতালা সন্তুষ্টির জন্য একটি হালাল পশু আল্লাহর
উদ্দেশ্যে কোরবানি করে থাকি।
আরো পড়ুনঃ মহিলারা কি ঈদের নামাজ ঘরে পড়তে পারবে
বর্তমানে আমাদের সমাজে অনেক মানুষ রয়েছে যারা কোরবানির সময় পশু কোরবানি করে
ঠিকই কিন্তু পশু কোরবানির সঠিক নিয়ম সম্পর্কে জানেনা। তাই আজকে আমরা তাদের
উদ্দেশ্যেই এই আর্টিকেলে বলবো যে কিভাবে কোরবানি করলে আল্লাহতালা পরিপূর্ণ
সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়।
১। পশু কোরবানি করার আগে এটি ঠিক করতে হবে পশুটি কয় ভাগে কোরবানি হবে। হাদিস
অনুযায়ী আপনি ১,৩,৫,৭, এর চেয়ে বেশি অথবা কম ভাবে কোরবানি করতে পারবেন না।
এছাড়া সবচেয়ে উত্তম আপনি যদি সামর্থ্যবান হন তাহলে একা কোরবানি করা।
২। এরপর হালাল একটি পশু কিনতে হবে এটি ছাগল,ভেড়া,গরু, উট ইত্যাদি হতে পারে।
এবং পশুটি কেনার সময় লক্ষ্য করতে হবে এটি যেন সুস্থ সবল হয়।
৩। কোরবানি ঈদের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে কোরবানির পশুটিকে ভালোভাবে গোসল করে
দিতে হবে এবং এরপর ঈদের নামাজের জন্য ঈদগা মাঠে যেতে হবে।
৪। কোরবানি না হওয়া পর্যন্ত কোন কিছুই খাওয়া যাবে না কোরবানি হওয়ার পর খেতে
হবে। সবচেয়ে উত্তম আপনি যদি একবারে কোরবানির গোশত দিয়েই খান তাহলে সবচেয়ে
ভালো হবে কারণ এটি নবীজির সুন্নত।
৫। কোরবানির পশুটিকে কেবলামুখী করে শোয়াতে হবে এবং একটি ধারালো অস্ত্র দিয়ে
বিসমিল্লাহ আল্লাহু আকবার বলে কোরবানির প্রশ্নটিকে আল্লাহর নামেজবাই করতে হবে।
এই সময় খেয়াল রাখতে হবে পশুটি যেন কোনোরকম কষ্ট না পায়।
৬। নিজের কুরবানী পশু নিজে জবাই করাই উত্তম। এবংকোরবানি পশুকে জবাই করার সময়
চাকুর মাথা দিয়ে গুতানো যাবে না এতে করে ওষুধটি স্টক করে মারা যেতে পারে।
৭। সবকিছু সম্পূর্ণ হয়ে গেলে এরপর কোরবানির মাংসটিকে বাসায় নিয়ে গিয়ে তিন
ভাগে ভাগ করতে হবে একটি গরীব মিসকিনের ভাগ, দ্বিতীয়টি আত্মীয়-স্বজনের ভাগ,
এবং তৃতীয়টি নিজের ভাগ এই ভাগটি সমানভাগে ভাগ করতে হবে।
পশু জবাই করার সময় মাথা কোন দিকে থাকবে
পশু কুরবানি করার সময় অবশ্যই পশুটির মাথা সঠিক দিকে রাখতে হবে কারণ জবাই
করার সময় মাথা ঠিক জায়গায় না থাকলে বা ভালোভাবে জবাই না করলে আপনি পশু
কোরবানি করার ফজিলত থেকে বঞ্চিত হবেন।
মুসলিম সম্প্রদায়ের সবচাইতে আনন্দের একটি দিন হচ্ছে ঈদুল আযহা। এবং
এই দিনের সবচাইতে আকর্ষণীয় একটি বিষয় হচ্ছে আল্লাহর উদ্দেশে একটি হালাল
পশু কোরবানি করা। এই দিনে আমরা আল্লাহতালা সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য এবং এবং
আল্লাহ তায়ালার কাছে তাকওয়া অর্জনের জন্য একটি হালাল পশু কোরবানি দিয়ে
থাকি।
আরো পড়ুনঃ লাইলাতুল কদর কেমন প্রকৃতির রাত
যেহেতু প্রতিবছরই একবার করে পশু কোরবানি করতে হয় তাই অনেকেরই পশু
জবাই করার সময় মাথা কোন দিকে থাকবে সে সম্পর্কে ভুল করে ফেলে। মূলত পশু
কোরবানি করার নিয়ম হচ্ছে পশুকে এগুলো আমাকে করে অর্থাৎ দক্ষিণ দিকে মুখ
করে রাখতে হবে এবং ডান হাতে ধারালো একটি অস্ত্র নিয়ে আল্লাহর নামে
বিসমিল্লাহ বলে জবাই করতে হবে।
আর পশু কোরবানি করার সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন অস্ত্রটি ধারালো হয়
যাতে করে জবাই করার সময় পশু কষ্ট না পায়। তাই পরিশেষে বলা যায় যে
কোরবানি সময় পশু জবাই কেবলামুখী অর্থাৎ দক্ষিণ দিকে মাথা রেখে জবাই করতে
হয়।
লেখকের মন্তব্য
আপনাদের যদি পশু কোরবানির নিয়ম এবং ফজিলত সম্পর্কিত আর্টিকেলটি ভালো লেগে থাকে
তাহলে আর্টিকেলটিতে একটি লাইক এবং কমেন্ট করুন। এবং এই তথ্যটি অন্যদেরকেও
শেয়ার করুন যাতে করে তারা এ সম্পর্কে উপকৃত হতে পারে।
rsfahim it নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url